মাঝ-সমুদ্র থেকে তাড়াহুড়ো করে এ রাজ্যের উপকূলের দিকে এসে পড়েছিল বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ। শনিবার তার চেয়েও বেশি গতিবেগ নিয়ে বাংলাদেশের দিকে রওনা দিল সে। আবহবিদেরা জানান, বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিলেও এই গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আজ, রবিবারও কলকাতা-সহ উপকূলীয় এলাকাগুলিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রাত থেকে বৃষ্টি কমতে পারে বলে মনে করছে হাওয়া অফিস।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার থেকেই কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এ দিনও বৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার উপকূলীয় এলাকাগুলিতে জোরালো বৃষ্টি হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়াও বয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে নামখানার কাছে একটি ট্রলার উল্টে তিন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত পর্যন্ত আরও দু’জনের খোঁজ মেলেনি।
উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানিয়েছেন, এ দিন দুপুরে ঘণ্টায় ৩৩ কিলোমিটার গতিবেগে বাংলাদেশের দিকে ছুটতে শুরু করেছে গভীর নিম্নচাপটি।
আজ, রবিবার দুপুরের পর সে স্থলভূমিতে ঢুকে পড়তে পারে। তবে গভীর নিম্নচাপটি আর শক্তি না বাড়ানোয় বাংলাদেশেও তেমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলেই আবহবিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ দাস বলেন, ‘‘রবিবার থেকে বৃষ্টি কমবে। সোমবার থেকে আকাশ ক্রমশ পরিষ্কার হতে শুরু করবে।’’
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, মেঘ কাটলেই তাপমাত্রা কিছুটা নামবে। মিলতে পারে হিমেল ভাবও। তবে তা সাময়িক। শীত এখনই আসবে না দক্ষিণবঙ্গে। গণেশবাবুর ব্যাখ্যা, আচমকা শীত হাজির হয় না। নভেম্বর থেকে তাপমাত্রা বারবার ওঠা-নামা করতে করতে এক সময় শীত থিতু হয়। স্বাভাবিক নির্ঘণ্ট মেনে চললেও ডিসেম্বরের আগে এ রাজ্যে শীত থিতু হওয়ার কথা নয়।
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ দানা বাঁধার পরেই সাগরে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল মৎস্যজীবীদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘মা গঙ্গা’ নামে একটি ট্রলার মাছ ধরে ফেরার পথে শুক্রবার নামখানার কয়েক কিলোমিটার আগে নোঙর করেছিল। সে সময় আর একটি ট্রলারের যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেওয়ায় তার ৩০ জন মৎস্যজীবীকেও ‘মা গঙ্গা’ ট্রলারে তুলে নেওয়া হয়। রাতে ঝোড়ো হাওয়ায় ‘মা গঙ্গা’ ট্রলারটি উল্টে যায়। পাঁচ জন মৎস্যজীবী বাদে বাকিরা সাঁতরে পাড়ে উঠে পড়েন। শনিবার কাকদ্বীপ অক্ষয়নগরের বাসিন্দা কর্ণধর দাস (৫০), সাগরের বঙ্কিম নগরের বাসিন্দা শেখ মুস্তাফা (২৫) এবং সাগরের কচুবেড়িয়ার উৎপল পাত্র (২৪)-এর দেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক ভাবে প্রশাসনের কর্তাদের অনুমান, অতিরিক্ত লোক ওঠার ফলেই ঝোড়ো হাওয়ার ধাক্কা সামলাতে পারেনি ট্রলারটি।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের দাবি, সাগর উত্তাল হওয়ায় কোনও মৎস্যজীবীকে তারা সাগরে যেতে দেয়নি। এ দিন সকালে পর্যটকদেরও সমুদ্রে নামতে দেয়নি পুলিশ। কাঁথির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগামী ৭২ ঘণ্টা আবহাওয়া প্রতিকুল থাকার আশঙ্কা রয়েছে। বিডিও-সহ বিভিন্ন অফিসার এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’ এ দিনের বৃষ্টিতে দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুরে হোটেলেই আটকে থাকতে হয়েছিল সপ্তাহান্তে ভিড় জমানো পর্যটকদের। এ দিন সকাল থেকে সৈকতের আশপাশে বহু দোকানও খোলেনি। দুপুরের পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় পর্যটকেরা সৈকতে যেতে শুরু করেন। দোকানপাটও খোলে।
দিন কয়েক আগে বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ দানা বাঁধতে দেখে প্রমাদ গুনেছিলেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা ছিল, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে দিতে গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। কিন্তু সেই আশঙ্কা সত্যি হবে না বলেই মৌসম ভবন জানিয়েছে। তারা বলছে, নিম্নচাপ গভীর সাগর থেকে জোলো হাওয়া শুষে শক্তি বাড়ায়। কিন্তু গতিবেগ বেশি থাকায় গভীর নিম্নচাপটি কম সময়ের মধ্যেই গভীর সাগর থেকে উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছিল। ফলে শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় কেন, অতি-গভীর নিম্নচাপেও পরিণত হতে পারেনি সে।
যদিও আবহবিদদের কেউ কেউ বলছেন, গভীর নিম্নচাপ সাগরের উপরে যত ক্ষণ থাকে, তত ক্ষণই তার শক্তি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে কোনও ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতি তৈরি হলে বাংলাদেশে ঢোকার আগে ফের শক্তি বাড়ানোর ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে এই ঋতু বদলের মরসুমে আবহাওয়ার আচমকা ভোলবদল মাঝেমধ্যেই দেখা যায়।
গভীর নিম্নচাপের মতি ফের বদলাবে কি না, তা বুঝতেই উপগ্রহ-চিত্রে ঠায় চোখ রেখেছে হাওয়া অফিস।