E-Paper

প্রশাসনের প্রচার সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না সালিশি সভা

দিন কয়েক আগে নোয়াপাড়া গ্রামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। গ্রামের মোড়ল রুবাই বেসরা শুক্রবার রাতে সালিশি সভা ডাকেন। সেখানেই এক দম্পতিকে ‘ডাইন’ ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ ০৭:০০
Arbitration meeting

প্রতীকী ছবি।

‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে কিংবা অন্য বিবাদের জেরে সালিশি সভা বসিয়ে বীরভূমে আদিবাসী সমাজের কোনও পরিবারকে ‘হেনস্থা’ বা ‘একঘরে’ করে রাখার অভিযোগ নতুন নয়। প্রশাসনের সচেনচনতা প্রচার বা অন্য উদ্যোগেও এই ঘটনা পুরোপুরি দূর করা যাচ্ছে না, তা সাঁইথিয়ার নোয়াপাড়া গ্রামের আদিবাসী দম্পতিকে ‘ডাইন’ সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনায় আবারও প্রমাণিত, মনে করছেন অনেকেই।

দিন কয়েক আগে নোয়াপাড়া গ্রামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। গ্রামের মোড়ল রুবাই বেসরা শুক্রবার রাতে সালিশি সভা ডাকেন। সেখানেই এক দম্পতিকে ‘ডাইন’ ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ। মৃত দম্পতির পরিবারের দাবি, সভার পরে মোড়লের নির্দেশে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে বেধড়ক পেটানো হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে শনিবার ওই দম্পতির মৃত্যু হয়। মোড়লকে শনিবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, তাঁকে জেরা করে আরও ছ’জনের নাম উঠে আসে। রবিবার রাতে সাঁইথিয়া থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাঁদের ধরা হয়।

২০১৪ সালে বীরভূমেরই লাভপুরের সুবলপুরে ভিন্ন সম্প্রদায়ের যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে গ্রামের এক আদিবাসী তরুণীকে সালিশি সভা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। জরিমানা দিতে অস্বীকার করায় মোড়লের নির্দেশে তরুণীকে ১২ জন গ্রামবাসী রাতভর ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ২০১০ সালেও একই অভিযোগে সালিশি সভার রায়ে রামপুরহাটের বটতলায় এক নাবালিকাকে বিবস্ত্র করে গ্রাম ঘোরানোর ঘটনা সামনে এসেছিল।

এ বার নোয়াপড়ার ঘটনাও বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রথমত, এই ধরনের সালিশি সভা রোধে প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আদিবাসী গ্রামগুলিতে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার চালালেও সুফল মিলছে কি? দ্বিতীয়ত, কোনও খবরই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে পৌঁছচ্ছে না। তৃতীয়ত, এই ঘটনার পরেও গ্রামটিতে প্রশাসনের তরফে সচেতনতা প্রচারের উদ্যোগ চোখে পড়েনি। চতুর্থত, এখন প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামেও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সংযোগ রয়েছে। তা-ও কেন এমন ঘটনা ঘটছে? দলগুলির একাংশ কি ভোটের তাগিদে নীরব থাকছে?

আদিবাসীদের অনেকে বলছেন, সালিশি সভার বিষয়টি আদিবাসী সমাজের কাছে খুব স্পর্শকাতর। ভারত জাকাত মানঝি পারগানা মহলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিশু হাঁসদার কথায়, ‘‘এর সঙ্গে অনেকে জড়িয়ে থাকেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তবুও সালিশি সভা অভিশাপের মতো আদিবাসী সমাজের ঘাড়ে চেপে বসে রয়েছে।’’

জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এখনও আমরা সে ভাবে সচেতনতা বোধ গড়ে তুলতে পারিনি। তাই আদিবাসীরা নিজেদের সমাজের অনুশাসনের খবর আমাদের দিতে চান না।’’পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের রাজ্য কমিটির সদস্য শুভাশিস গড়াই জানান, ধারাবাহিক প্রচার অভিযান সত্ত্বেও সালিশি সভা বন্ধ করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে কী কারণ, তা প্রশাসনকে নিয়ে গ্রামে গিয়ে খতিয়ে দেখবেন।’’ বিডিও (সাঁইথিয়া) সৈকত বিশ্বাস জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ওই গ্রামে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার করা হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Arbitration meeting sainthia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy