দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রায়দিঘি বাজারের পাশের জমিতে বহুমুখী প্রকল্পের কাজের টাকা অনুমোদনের পরে কাজ শুরু হলেও কিছু দিন চলার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পটি শেষ হলে রায়দিঘি নানা ভাবে উপকৃত হত।
২০১০ সালের তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের আমলে রায়দিঘিতে বহুমুখী প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়। ওই প্রকল্পের মধ্যে ছিল একটি মার্কেট কমপ্লেক্স, বাস টার্মিনাস, হিমঘর, অতিথি নিবাস। সেই মতো সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ১৩ কোটি টাকা অনুমোদন হওয়ার পরে রায়দিঘি বাজারের পাশেই সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর ও সেচ দফতরের প্রায় ২০ বিঘা জমিতে প্রথমে মার্কেট কমপ্লেক্সের ভবন নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাস কয়েক কাজ চলার পরে ২০১১ সালের নির্বাচনের মুখে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
রায়দিঘি এলাকাটি মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে। রয়েছে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। অধিকাংশ কৃষিজীবী মানুষ। ফলে কৃষিজাত শাক সব্জি বিক্রি বা সংরক্ষণের জন্য একটি মার্কেট কমপ্লেক্সের দাবি এই এলাকার মানুষের বহু দিনের। সেই সঙ্গে সব্জি বা মাছ সংরক্ষণের জন্য হিমঘর তৈরিরও দাবি আছে। হিমঘরের অভাবে এবং পণ্য বাজারজাত করার সুবন্দোবস্ত না থাকায় সব্জির মরসুমে উদ্বৃত্ত শাক-সব্জি অনেক সময় পচন ধরে যাওয়ায় ফেলে দিতে হয়। এতে প্রতি বছর ক্ষতির সন্মুখীন হন চাষিরা।
রায়দিঘি থেকে গাড়ি চলাচল করে ডায়মন্ড হারবার, বোলের বাজার, মথুরাপুর স্টেশন মোড় পর্যন্ত। রয়েছে বাস, অটো, ট্রেকার ছাড়াও বিভিন্ন যানবাহন। কিন্তু রায়দিঘিতে কোথাও কোনও গাড়ি রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। সে কারণেই রায়দিঘি বাজারের স্বল্পপরিসর রাস্তার উপরে যত্রতত্র গাড়ি রাখতে হয়। যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। দুর্ঘটনাও লেগে আছে। বাস টার্মিনাস তৈরি হলে সমস্যা সমাধান হত বলে স্থানীয় মানুষের আশ্বাস।
২০১১ সালের এপ্রিল মাসে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম এবং তৃণমূলের প্রার্থীদের প্রথম ও প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল ওই বহুমুখী প্রকল্পের কাজ শেষ করা। ভোট মিটে যাওয়ার পরে অবশ্য কেউ আর সে সব নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি বলে মানুষের ক্ষোভ আছে। প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে মার্কেট কমপ্লেক্স। অন্য কাজগুলি শুরুই হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাম জমানায় ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও বিধানসভা নির্বাচনের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভোটে জেতে তৃণমূল। তারা ভোটে বহুমুখী প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে ওই জমিতে রবীন্দ্রভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সে কাজও হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস পুরকাইত, অসীম মণ্ডলদের দাবি, এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রায়দিঘির চেহারাটাই বদলে যেত। এখানে বড় বাজার গড়ে উঠলে উপকৃত হতেন রায়দিঘি ছাড়াও পাশাপাশি পাথরপ্রতিমা, জয়নগর দুই ব্লকের বাসিন্দারাও। প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওই বহুমুখী প্রকল্পের কাজ আমাদের সময়ে শুরু করেছিলাম। কিন্তু পরে তৃণমূল ক্ষমতায় আসায় কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। টাকা অনুমোদনের পরেও কেন এত দিন কাজ বন্ধ, তা শাসকদল ও প্রশাসন বলতে পারবে। সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার বক্তব্য, ওই প্রকল্পের কাজ কী অবস্থায় রয়েছে, খোঁজ নিয়ে যাতে দ্রুত কাজ শুরু করা যায়, সে ব্যবস্থা নেবো।