বেলাগাম কথাবার্তার জন্য মাঝেমধ্যেই তিনি শিরোনামে আসেন। নিজেও নিজেকে ‘দুর্মুখ’ বলেই আখ্যায়িত করেন। কিন্তু সোমবার এতটাই ‘বেফাঁস’ ভঙ্গিতে তাঁর মুখ থেকে ছিটকে বেরোল মন্তব্যটা যে, আগেভাগে দোষ কবুল করে রেখেও লাভ হল না। মুহূর্তের জন্য হলেও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রুকুঞ্চনের কারণ হয়ে উঠলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। পরে অবশ্য পরিস্থিতি সহজ করে দিয়ে উদয়নের কিঞ্চিৎ প্রশংসা মমতা করলেন। কিন্তু উদয়নের ‘বেফাঁস’ বাক্য এবং মুখ্যমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কারও নজর এড়ায়নি।
সোমবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের শিল্পোদ্যোগী এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের মূল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই সারিতে বসার ব্যবস্থা হয়েছিল রাজ্যের তিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক এবং উদয়ন গুহের। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবও তাঁদের সঙ্গে সামনের সারিতেই ছিলেন। বৈঠকের শেষ দিকে তাঁদেরকে একে একে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। গৌতম, অরূপ, মলয়দের বলা হয়ে যাওয়ার পরে আসে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়নের পালা। তাঁর জন্য বরাদ্দ মিনিটখানেকের মধ্যেই উদয়ন এমন মন্তব্য করে বসেন যে, মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে সে কথা খণ্ডন করতে বাধ্য হন।
অরূপ, মলয়ের বলা হয়ে যাওয়ার পরে উদয়নকে মুখ্যমন্ত্রী অল্প কথায় তাঁর বক্তব্য জানাতে বলেন। তার পরে হালকা মেজাজে বলেন, ‘‘মনে রেখো, এটা কিন্তু দিনহাটা নয়।’’ উদয়নও ভরপুর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হালকা মেজাজেই নিজের বক্তব্য শুরু করেন এবং প্রথমেই নিজেকে ‘দুর্মুখ’ বলে উল্লেখ করেন। তার পরে বলেন যে, তাঁর এই স্বভাবের কারণে মুখ্যমন্ত্রীও সম্ভবত তাঁকে একটু ‘ভয় পান’। উদয়নের এই মন্তব্য শুনেই মমতা মাইক্রোফোন তুলে নেন। বলেন, ‘‘আমি কাউকে ভয়-টয় পাই না!’’ কী বলতে কী বলে ফেলেছেন বুঝে উদয়ন তড়িঘড়ি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। বলেন, ‘‘আমাকে নয় দিদি, আমার মুখকে।’’ মমতা ফের বলেন, ‘‘তোমার মুখকেও আমি ভয় পাই না।’’ কিন্তু এর পরে মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি সহজ করে দিয়ে আবার হালকা মেজাজে বলেন, ‘‘আমি শুধু তোমাকে বলে দিলাম, এটা দিনহাটা নয়, সেটা মনে রেখো।’’
আরও পড়ুন:
উদয়ন আর কথা বাড়াননি। তিনি বলেন, ‘‘সবাই খুব ভাল বলেছেন। সবার কথাই শুনতে খুব সুন্দর লাগল। কিন্তু সবাই আজ যে রকম সমর্থন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে চাইলেন, সেই একই সমর্থন যদি আপনাদের দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দিকেও আসে, তা হলে আরও ভাল হবে।’’ উত্তরবঙ্গের উন্নতি যদি কেউ সত্যিই চান, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমেই তা হবে এবং তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই সমর্থন জোগাতে হবে বলে উদয়ন প্রেক্ষাগৃহে হাজির শিল্পদ্যোগী ও ব্যবসায়ীদের বার্তা দেন।
উদয়ন থামতেই ফের মুখ্যমন্ত্রী মাইক্রোফোন হাতে তুলে নেন। সহাস্যে বলেন, ‘‘এই যে কথাটা বলল না? দুর্মুখ! ও দুর্মুখ হলেও আজ ভাল বলেছে। এর জন্য ওকে একটা রসগোল্লা খাইয়ে দিয়ো।’’