Advertisement
E-Paper

রাজনীতির প্রথম ম্যাচে হেরেও হাসি দীপেন্দুর

ম্যাচের উননব্বই মিনিটে গোল খেয়ে গেলে হোম টিমের ক্যাপ্টেনের যেমন চেহারা হয়, তেমনই দেখাচ্ছিল বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থীকে। প্রথম দশ রাউন্ডে এগিয়ে থেকে শেষ রাউন্ডের গণনায় পিছিয়ে গেলেন তিনি। মাত্র হাজার দেড়েক ভোটের জন্য রাজনীতিতে প্রথম ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে গেল দীপেন্দু বিশ্বাসের।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭

ম্যাচের উননব্বই মিনিটে গোল খেয়ে গেলে হোম টিমের ক্যাপ্টেনের যেমন চেহারা হয়, তেমনই দেখাচ্ছিল বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থীকে। প্রথম দশ রাউন্ডে এগিয়ে থেকে শেষ রাউন্ডের গণনায় পিছিয়ে গেলেন তিনি। মাত্র হাজার দেড়েক ভোটের জন্য রাজনীতিতে প্রথম ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে গেল দীপেন্দু বিশ্বাসের।

শুরুটা হয়েছিল ভাল। মঙ্গলবার সকাল আটটার কিছু আগে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট পরে দীপেন্দু বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ঢুকেছিলেন বসিরহাট হাইস্কুলের গণনাকেন্দ্রে। কয়েকশো মিটার দূরে ব্যারিকেড করেছিল পুলিশ। এজেন্ট, প্রার্থী বাদে কোনও দলের কাউকে গণনাকেন্দ্রের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।

ফুটবল মাঠ কাঁপিয়ে এলেও রাজনীতির ময়দানে তিনি নতুন। বসিরহাটের নৈহাটির ছেলে দীপেন্দু তাঁর এলাকার ‘ঘরের ছেলে।’ ভোটের প্রচারে বেরিয়ে সবার সাদর অভ্যর্থনা পেয়েছেন, অকাতরে ভোট চেয়েওছেন। এ দিন সকালেও তাঁকে বেশ নিরুদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। দলের পোড়-খাওয়া কর্মীদের মুখে অবশ্য হাসি ফোটেনি। লোকসভা ভোটে শহর এলাকাতে বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বসিরহাট ও টাকি পুর এলাকায় তৃণমূল কেমন করবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলই।

গণনাপর্ব শুরু হয় গ্রামীণ এলাকার ইভিএম দিয়ে। বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের মধ্যে সাতটি পঞ্চায়েত এলাকা আছে। যার পাঁচটিতেই ক্ষমতায় তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটেও গ্রামীণ এলাকায় ভাল ফল করেছিল তৃণমূল। তাই প্রত্যাশা মতোই একের পর এক রাউন্ডে এগিয়ে যেতে থাকে তৃণমূল। প্রথম রাউন্ডে তাদের লিড ছিল ২,২৭০ ভোটের। দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩,৪০৫টি। ধাপে ধাপে পঞ্চম রাউন্ডে গিয়ে ব্যবধান দাঁড়ায় ১৭,০৮০ ভোটের।

ষষ্ঠ রাউন্ডেই ইঙ্গিতটা ছিল। দীপেন্দুর মার্জিন কমে দাঁড়ায় ১৪,০১৮টি ভোটের। ষষ্ঠ রাউন্ডের পর থেকেই গণনাকেন্দ্রের বাইরে তৃণমূল শিবিরের ভিড়টা ফাঁকা হতে শুরু করেছিল। কেন্দ্রের মধ্যে থাকা দলের এজেন্টরাও অনেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মজুমদার এক বার খানিক ক্ষণের জন্য ঘুরে গিয়েছেন গণনাকেন্দ্রে। বার কয়েক এসেছেন সিপিএম প্রার্থী মৃণাল চক্রবর্তীও। কিন্তু তখনও দেখা নেই বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের।

ষষ্ঠ রাউন্ডের পর থেকে ধাপে ধাপে কমতে থাকে দীপেন্দুর এগিয়ে থাকার ব্যবধান। দশম রাউন্ডের শেষে মাত্র ১৫২৭ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী। তত ক্ষণে থমথমে দীপেন্দুর মুখ। শেষ রাউন্ড গণনা হয়ে ‘পাকা খবর’ পাওয়ার পরে এলেন বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। এসেই অবশ্য পড়লেন কিছুটা উত্তেজনার মধ্যে। তৃণমূলের তরফে পুনর্গণনার দাবি তোলা হয়েছে তত ক্ষণে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ভুবনেশ যাদব জানিয়েছেন, নতুন করে ইভিএমের ভোট যোগ করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু তা বলে পুনর্গণনা সম্ভব নয়। তৃণমূলের প্রস্তাবে আপত্তি জানায় বিজেপি-ও। তা নিয়ে তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি-সহ দলের লোকজনের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের তর্কাতর্কি বাধে। গলার সুর চড়ান শমীকবাবুও।

শেষমেশ তৃণমূলের তরফে বলা হয়, পুনর্গণনা যে সম্ভব নয়, তা লিখে জানাতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই মতো কমিশনের সদর কার্যালয় দিল্লিতে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে লিখিত ভাবে একই কথা জানানোর পরে ক্ষান্ত দেয় তৃণমূল।

বেলা আড়াইটে নাগাদ সরকারি ভাবে শমীকবাবুর হাতে জয়ের শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে অভিনন্দন জানান দীপেন্দু, ইদ্রিশরা। দীপেন্দুকে বুকে টেনে নেন শমীক। হেসে বলেন, “আমি ওর ফুটবলের বড় ভক্ত। ব্যক্তিগত সম্পর্কও ভাল। রাজনীতি তো রাজনীতির জায়গায়।”

ইদ্রিশের সঙ্গেও হাত মিলিয়ে চা খেতে চেয়েছিলেন শমীক। বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদের পাশেও বসেন। সৌজন্য বিনিময় হয় দু’জনের মধ্যে। তবে নির্বাচন কমিশনের কাজের তাড়ায় জয়ী প্রার্থীকে আর চা খাওয়ানোর সময় পাননি ইদ্রিশ। পরে বলেন, “শমীকবাবু বসিরহাটে আমার প্রতিবেশী। একই এলাকায় থাকি দু’জনে। রাজনীতির ময়দানে বিভেদ যতই থাক, ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই।”

আর কী বলছেন বসিরহাটের ভূমিপুত্র দীপেন্দু?

গোটা প্রচারের সময়ে মুখের হাসিটি তাঁর অমলিন ছিল। সব সময়েই বলেছেন, ভোট নিয়ে টেনশন নেই তাঁর। ফল বেরোনোর পরে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেন অল্প সময়ের মধ্যেই। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ থাকলেও মুখে ফিরে এল পরিচিত হাসি। বললেন, “আমি ময়দানের ছেলে। খেলার মাঠে এমন তো হয়েই থাকে। কখনও না কখনও গোল তো করবই!”

bypoll election basirhat assembly chowringhee assembly dipendu biswas arunakksha bhattacharyay nirmal basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy