Advertisement
E-Paper

Body Donor: অঙ্গদানের পুণ্যেও অটুট মরদেহের মর্যাদা

সভায় আক্ষেপ শোনা গেল, জনপ্রিয় ছবির সংলাপ কিন্তু বলে, মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে! অর্থাৎ বাস্তবে ‘মরদেহের মর্যাদা’ প্রায়ই ক্ষুণ্ণ হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২২ ০৮:২২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সে এক দুঃসহ সময়! যখন প্রিয়জনের দেহ শেষ বার ছুঁতেও ভয় পাচ্ছেন পরিজনেরা। বিচ্ছিন্ন রোগশয্যায় মৃত্যুর পরে বেওয়ারিশ লাশের মতো যেতে হচ্ছে চিতায় বা কবরে। গণচিতা, গণকবরের নানা ছবি এখনও অনেকের চোখে ভাসছে। অতিমারির মৃত্যু বিভীষিকার দগদগে স্মৃতির পটভূমিতেই মরদেহের মর্যাদা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খেল শনিবার গোলপার্কে এক সান্ধ্য আলোচনার পরিসরে।

এ বিষয়ে অবশ্য মতের ফারাক নেই বিজ্ঞান, আইন থেকে ধর্ম পথের পথিকদের। রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দ পুরাণের দধীচির আত্মদানের কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, “একটা সময়ে সন্ন্যাসীর মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হত। মাছেদের ভক্ষ্য হলেও তা জীবসেবায় কাজে লাগত।” রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের মনে পড়ল, ডাক্তারির ক্লাসে শব ব্যবচ্ছেদের সময়ে জনৈক প্রবীণ ডোমের কাছে শেখা অমূল্য কথাগুলি। ডাক্তারির পড়ুয়াদের যিনি পাঠ্য বইয়ের মতো ‘শিক্ষার আকর’ মৃতদেহকেও ‘নমো’ করতে শিখিয়েছিলেন। দেবাশিসবাবুর মতে, মৃতদেহের অমর্যাদার আশঙ্কায় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে দেহদানে বিমুখ হওয়া অমূলক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন তথা আইন বিভাগের প্রধান যতীন্দ্রকুমার দাসেরও কথা, “সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, জীবিত বা মৃতের দেহের মর্যাদায় ফারাক নেই।”

সভায় আক্ষেপ শোনা গেল, জনপ্রিয় ছবির সংলাপ কিন্তু বলে, মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে! অর্থাৎ বাস্তবে ‘মরদেহের মর্যাদা’ প্রায়ই ক্ষুণ্ণ হয়। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন পলিটেকনিক কলেজের প্রধান স্বামী বেদাতীতানন্দের মতে, “আধ্যাত্মিকতা দেহের প্রতি আসক্তি দূর করতে শেখায়। কিন্তু মৃতদেহ আত্মার ঘরবাড়ি, এটাও মনে রাখার!” ২৪ বছর আগে সমাজকর্মী সুশীল সাহার মায়ের দেহদান করা হয়েছিল। কিন্তু নানা অব্যবস্থায় তাঁদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাঁর মতে, “এই ছবিটা এখনও বিশেষ পাল্টায়নি।” আবার তিনি বলেন, এক বিখ্যাত কবির পরিবারের বাধাতেই তাঁর দেহদানের শেষ ইচ্ছা রাখা যায়নি। আরও অনেকের দেহদান করতে গিয়ে নানা ভোগান্তির কথাও উঠে এল সভায়। এ রাজ্যে অঙ্গদান পর্বটি আরও মসৃণ করার দাবিতেও সরব হলেন বিশিষ্ট অভ্যাগতেরা।

রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা আশ্বস্ত করলেন, চিকিৎসকেরা রোগীর ‘ব্রেন ডেথ’ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার অন্তত ছ’ঘণ্টা পরে অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে কোভিডে মৃতদেহ নিয়ে গোড়ায় ভুল ধারণার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেহদান সম্ভব হয়নি। ঠিক এক বছর আগে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাবা নির্মলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারান পুত্র কোভিড-যোদ্ধা গবেষক-বিজ্ঞানী নীলোৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়। নীলোৎপল ও তাঁর বোন শর্মিষ্ঠার মনে পড়ছিল, তখন সংক্রমণের আশঙ্কা না-থাকলেও পাড়াপ্রতিবেশীর আপত্তিতে বাবাকে শেষ বার বাড়িতে আনা যায়নি। এই আলোচনার আয়োজন তাঁদের জন্যও একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করল।

Body Donation Government Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy