পাঁশকুড়া হাসপাতালের মহিলাকর্মী ধর্ষণকাণ্ডে অবশেষে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতরের তিন মহিলা আধিকারিক-সহ পাঁচ জনের এই কমিটিতে এক মহিলা আইনজীবীও রয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে এই কমিটির সদস্যেরা পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখেন। পরে হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে কথাও বলেন তাঁরা। সূত্রের খবর, শনিবার এই হাসপাতাল পরিদর্শনে মহিলা কমিশনের আসার কথা রয়েছে।
শুক্রবার কমিটির আসার খবর পেয়ে সকাল থেকেই হাসপাতালের কর্মীরা তাঁদের অভিযোগ তৈরি করে রেখেছিলেন। অভিযুক্ত ফেসিলিটি ম্যানেজারের বিরুদ্ধে লিখিত আকারে একাধিক অভিযোগ তুলে দেওয়া হয় কমিটির সদস্যদের হাতে। কমিটির সদস্যেরা হাসপাতালের কর্মীদের সুরক্ষা-সহ চিকিৎসা পরিষেবার একাধিক বিষয় খতিয়ে দেখেন। সূত্রের খবর, কমিটির সদস্যেরা শীঘ্রই তাঁদের রিপোর্ট জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হাতে তুলে দেবেন।
পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার কৌশিক ধল বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে অভিযুক্তের বিকল্প হিসেবে নতুন কোনও ফেসিলিটি ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়নি। তবে তার জন্য হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবায় কোনও সমস্যা হয়নি। আমরা নিয়োগকারী সংস্থাকে সাফ জানিয়েছি, আগামী দিনে নতুন ফেসিলিটি ম্যানেজার নিয়োগের আগে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের রেকর্ড আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় অভিযুক্তের যাতে কঠোর শাস্তি হয়, সেই বিষয়েও পুলিশকে আবেদন জানানো হয়েছে।’’
হাসপাতাল সুপারের দাবি, ‘‘অভিযুক্ত নিজের ক্ষমতা বলে হাসপাতালে আলাদা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল বলে কর্মীরা অভিযোগ জানিয়েছেন। এই বিষয়ে নিয়োগকারী সংস্থাও উদাসীন ছিল। অনেক কর্মী অভিযুক্তের অত্যাচারে কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এখন অভিযুক্ত গ্রেফতার হতেই তাঁরা হাসপাতালে নতুন করে কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে হাসপাতালের ভিতরেই যে ভাবে মহিলাকর্মী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সেই ঘটনার প্রকৃত বিচার চাইছি আমরা।’’
পুলিশের একটি সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই অভিযুক্তকে হাসপাতালে নিয়ে এসে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে আগামী সোমবার অভিযুক্তের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার পর মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে হাজির করানো হবে। সেখানে পুনরায় অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে বলেই পাঁশকুড়া থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
শুক্রবার রাতেই পাঁশকুড়ায় পৌঁছোন রাজ্য মহিলা কমিশনের তিন প্রতিনিধি। দলের নেতৃত্বে ছিলেন চিত্রপরিচালক তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলে গোটা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। বিভিন্ন বিষয় নির্যাতিতা তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন কমিশনের প্রতিনিধিরা। পরে তাঁরা পাঁশকুড়া থানায় গিয়ে মামলার কেস ডায়েরি দেখেন। তদন্তের গতিপ্রকৃতির বিষয়েও খোঁজ খবর নেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।
শুক্রবার লীনা বলেন, “এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। ফেসিলিটি ম্যানেজার হিসাবে কাজের ফাঁকে মহিলা কর্মীদের যৌন হেনস্থা চালাত অভিযুক্ত। হাসপাতালের মধ্যে ওই ব্যক্তি ‘হুমকি-প্রথা’ চালাত। আমরা নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি অভিযুক্ত ক্রমাগত হুমকি দিত। তার প্রভাব প্রতিপত্তির ভয়েই এত দিন ওই তরুণী মুখ খোলেননি। তবে এখন একজন মুখ খোলার পরেই একের পর এক মহিলা কর্মী মুখ খুলতে শুরু করেছেন। আমরা সেই মহিলা কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলব।”
লীনা জানান, গোটা ঘটনার বিষয়ে তদন্তের রিপোর্ট বিভাগীয় মন্ত্রীকে জানানো হবে। নির্যাতিতাকে ব্যক্তিগত ভাবে পাশে থাকারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আগামী দিনে ওই নির্যাতিতার লড়াইয়ে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।