রাজ্য পুলিশের কর্তারা বাছাই করা অফিসারদের সিবিআই দফতরে পাঠিয়েছেন। ইন্টারভিউয়ে যাঁরা মনোনীত হবেন, তাঁদের সিবিআইতে ডেপুটেশনে নিয়ে সারদা, রোজ ভ্যালির মতো চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে নামানো হবে।
এ যেন বিপক্ষ বাহিনীকে লোকবল জুগিয়ে সাহায্য করা!
গত সপ্তাহেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আমার পিছনে কেউ যদি সিবিআই লাগায়, লাগাক! জেলে যেতে আমি ভয় পাই না।’’ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাধ্য হয়ে সেই তৃণমূল সরকারই এখন সিবিআইকে পুলিশ দিয়ে সাহায্য করছে। এমন সময়, যখন সিবিআই তেড়েফুঁড়ে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে নামছে। এবং তৃণমূলের ১৯ জনকে তলব করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার তদন্ত করতে যে পরিমাণ লোকবল দরকার, তা তাদের নেই। শীর্ষ আদালত তখন সিবিআইকে পুলিশ দিয়ে সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেই। রাজ্যের আইনজীবী জয়দীপ মজুমদার বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বেঞ্চকে আজ জানান, ‘আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্য পুলিশ সিবিআইকে মোট ৮০ জন পুলিশ অফিসারের নাম পাঠিয়েছে।’ গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজ্য পুলিশের এডিজি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) পি নীরজনয়ন সিবিআইয়ের ডিআইজি শঙ্খশুভ্র বাগচীকে চিঠি লিখে এই প্যানেলের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। এখন কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে এই ৮০ জনের ইন্টারভিউ পর্ব চলছে। বাছাই পর্বের পর তাঁদের সিবিআইতে ডেপুটেশনে নেওয়া হবে।
তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই মনে করছেন, রণকৌশলের ভুলেই এখন রাজ্য সরকারকে বাহিনী দিয়ে সিবিআইকে সাহায্য করতে হচ্ছে। মুকুল রায়ের মতো তৃণমূল নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানোর পরে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস। অভিযোগ ছিল, বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে সিবিআইকে ব্যবহার করছে। তাই বাকি সব সংস্থা ছেড়ে শুধু সারদার তদন্ত নিয়ে পড়েছে সিবিআই। অন্য মামলা হাতে নিচ্ছে না।
সেই সময় সিবিআই যুক্তি দেয়, পশ্চিমবঙ্গে সারদা ছাড়া আরও ২৬৫টি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। তা ছাড়া, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। তার জন্য বিপুল লোকবল দরকার। তাই রাজ্য সরকারই লোক দিয়ে সাহায্য করুক। এই নির্দেশ পেয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় রাজ্য সরকার। কারণ রাজ্য পুলিশেই বহু পদ খালি পড়ে রয়েছে।
আদালতের নির্দেশ মেনে ৮০ জনের যে প্যানেল পাঠিয়েছে রাজ্য, তার মধ্যে রয়েছেন ১২ জন ডিএসপি, ৮ জন ইন্সপেক্টর, ২০ জন এসআই এবং ৪০ জন কনস্টেবল। এঁদের মধ্যে থেকে ৬ জন ডিএসপি, ৪ জন ইন্সপেক্টর, ১০ জন এসআই ও ২০ জন কনস্টেবলকে বেছে নিয়ে সিবিআইতে ডেপুটেশনে নিয়োগ করা হবে। সিবিআই সূত্রের অবশ্য দাবি, এতেও তাঁদের লোকবলের অভাব মিটছে না। যার জন্য অন্তত ২৫ জন পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদের অফিসার দরকার। অথচ ওই পদের কোনও অফিসারকেই দিতে রাজি হয়নি রাজ্য। রাজ্যের কাছ থেকে মোট ৩৪০ জন চাওয়া হয়েছিল। সেই জায়গায় মাত্র ৪০ জন দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy