Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Engineer

অভাবে চায়ের দোকান ইঞ্জিনিয়ারের

২০১৩ সালে মাধ্যমিকে স্টার পেয়ে উত্তীর্ণ হন সঞ্জু। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, ২০১৫ সালে জয়েন্ট এন্ট্রান্সেও উত্তীর্ণ হন।

দোকানে সঞ্জু কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র

দোকানে সঞ্জু কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র

সুদিন মণ্ডল
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪৫
Share: Save:

সংসারের অনটন আর ব্যাঙ্কে ঋণ বাড়ছিল দিন-দিন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেও চাকরি মেলেনি। তার মধ্যে অসুস্থ হন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে বাবা। এই অবস্থায় ফুটপাতে চা বিক্রিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের সঞ্জু কুণ্ডু।

২০১৩ সালে মাধ্যমিকে স্টার পেয়ে উত্তীর্ণ হন সঞ্জু। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, ২০১৫ সালে জয়েন্ট এন্ট্রান্সেও উত্তীর্ণ হন। ভর্তি হন জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। হস্টেল খরচ ও পড়াশোনার জিনিসপত্র কেনার জন্য ২০১৬ সালে মন্তেশ্বর বাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার টাকার শিক্ষা-ঋণ নেন তিনি।

সঞ্জুর দাবি, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, পড়াশোনা শেষ করার পরে কাজে যোগ দিয়ে ঋণ শোধ করলেও চলবে। ইতিমধ্যে বছর দু’য়েক আগে সঞ্জুর বোনের বিয়ে ঠিক হওয়ায় ঋণের টাকা শোধ করা হয়নি। সঞ্জুর বাবা, পেশায় আনাজ বিক্রেতা নবকুমার কুণ্ডুর দাবি, শোধ করতে না পারায় ঋণের পরিমাণ পৌঁছে যায় দু’লক্ষ টাকার কাছাকাছি।

আরও পড়ুন: ক্লাস বন্ধ, তাই বই তুলে দোকানদারি

২০১৯ সালের শেষে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন সঞ্জু। তাঁর দাবি, নানা সংস্থায় আবেদন করেছেন। অনলাইনে পরীক্ষাও দিয়েছেন। চাকরি পাননি। গত জুলাইয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করার সময়ে ‘সানস্ট্রোক’ হয় নবকুমারবাবুর। সুস্থ হয়ে উঠলেও কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কের তরফে টাকা শোধ করার জন্য আইনি চিঠি পাঠানোর কথা বলা হয়।

সঞ্জুর দাবি, এককালীন আট হাজার টাকা জমা করার পরে, দু’হাজার তিনশো টাকা করে মাসিক কিস্তি ঠিক হয়েছে। কিন্তু সংসারের খরচ, চিকিৎসার খরচের সঙ্গে কিস্তির টাকা জোগাড় হবে কী ভাবে ভেবে ঘুম উড়ে যায় তাঁদের। মাসখানেক আগে মন্তেশ্বর-মালডাঙা রাস্তার ধারে ফুটপাতেই চায়ের দোকান দেন সঞ্জু। তিনি বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাকরি পেয়ে ঋণ শোধ করব ভেবেছিলাম। পরিস্থিতি যা তাতে চায়ের দোকান খুলতে হল! কী ভাবে টাকা শোধ করব, সংসারের কী হবে—বুঝতে পারছি না।’’

আরও পড়ুন: আত্মহত্যায় তৃতীয় স্থান বাংলার, শহরে দ্বিতীয় আসানসোল

বিধায়ক (মন্তেশ্বর) সৈকত পাঁজা বলেন, ‘‘পরিস্থিতির চাপে এক জন ইঞ্জিনিয়ারকে চায়ের দোকান খুলতে হয়েছে, যা কাম্য নয়। পরিবারটির পাশে রয়েছি।’’ পাশাপাশি, ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কিস্তি শোধের সময় বাড়ানো যাবে কি না দেখা হবে, জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Engineer Tea Stall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE