নবমীতেও জনজোয়ার! ছবি: পিটিআই।
ঠাকুর দেখাই মাটি হবে! নবমীর সকাল থেকে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে অন্তত তেমনটাই মনে হয়েছিল। বেলা বাড়লে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড়ের অবস্থা দেখে মিলেও যাচ্ছিল সেই আশঙ্কা। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতেই বৃষ্টি উধাও! শেষমেশ বর্ষণাসুরকে হারিয়ে সপ্তমী, অষ্টমীর মতোই উৎসবের শেষ রাতে মানুষের ঢল নামল রাস্তায়। দক্ষিণের একডালিয়া, সুরুচি, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, সিংহী পার্ক, চেতলা, মুদিয়ালি, দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা থেকে শুরু করে উত্তরের হাতিবাগান সর্বজনীন, টালা প্রত্যয়, বাগবাজার, কুমারটুলি পার্ক— সর্বত্র মানুষের ভিড় সুনামির মতো আছড়ে পড়ল। কোথাও কোথাও আবার তা সপ্তমী ও অষ্টমীর রাতকেও টেক্কা দিয়েছে বলে দাবি করছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
এ বারের কলকাতার পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অযোধ্যায় দ্বারোদ্ঘাটন হবে রামমন্দিরের। তার আগে কলকাতাতেই সেই মন্দির তৈরি করে শারদোৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে লেবুতলা পার্কের এই পুজো। নবমীর দুপুরের বৃষ্টি তাদের ভাবনায় ফেললেও, সন্ধ্যা গড়াতেই জনতার ঢল তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, নবমীর ভিড় সপ্তমী-অষ্টমীকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। আবার উত্তর কলকাতার টালা প্রত্যয় এ বার পুজো নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে জনতার প্রশংসা পেয়েছে। বৃষ্টির ভ্রুকুটি এই পুজো কমিটির কর্তাদের কপালেও চিন্তার বলিরেখা ফেলেছিল। কিন্তু বিকেল গড়াতেই সেই চেনা ছবি। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা শুভাশিস সোম বলেন, ‘‘দুপুরের বৃষ্টি আমাদের কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলেছিল। তখন থেকেই বাড়তি সতর্কতা নিয়ে আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। কিন্তু বিকেল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় আবারও মানুষের ঢল দেখা গেল। সবই মায়ের কৃপায়!’’
কলকাতায় পুজো দেখার জন্য যেমন লোকাল ট্রেনে চেপে মানুষ পৌঁছেছেন, সেই রকমই উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির প্রচুর মানুষ মেট্রো করে এসেছেন পুজো দেখতে। কলেজ স্কোয়ারের মণ্ডপে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ দম্পতি জানালেন, সকালেই তাঁরা খবরে দেখেছিলেন, নবমীতে বৃষ্টি হবে। যে ভাবে সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল, তাতে না-বেরোনোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিকেলের পর থেকে আকাশ একটু একটু পরিষ্কার হতেই তাঁরা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘বৃষ্টি কমতে দেখেই স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি ছাতা নিয়ে। ছাতা তো লাগলই না। এখন মনে হচ্ছে শুধু শুধু নিয়ে এসেছি।’’
নবমী-দশমীতে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সেই মতো সোমবার সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিল। দুপুর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সময় ভিড় খানিকটা কমলেও, সন্ধ্যা থেকেই শহরের পুজোগুলিতে স্বাভাবিক চিত্রই ধরা পড়েছে। বেহালা নূতন দলের পুজো দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম বড় পুজো। রাতের মণ্ডপে মানুষের ঢল দেখে ওই পুজোর অন্যতম কর্তা দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে সত্যিই ভিড় অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখছি, মানুষ ছাতা নিয়েই ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। সন্ধ্যা বাড়তেই মণ্ডপে ভিড় বেড়েছে। রাতে তো জনসাগর!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy