Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Durgapur

দুর্গাপুরে গেট বেঁকে জল বেরোচ্ছে সমানে

সেচের কাজে এ মুহূর্তে জলের প্রয়োজন নেই। তাই ব্যারাজের গেট বন্ধ করে জল ধরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই জলের চাপেই বেঁকে গেল দুর্গাপুর ব্যারাজের এক নম্বর লকগেট।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ১৩:৪৫
Share: Save:

সেচের কাজে এ মুহূর্তে জলের প্রয়োজন নেই। তাই ব্যারাজের গেট বন্ধ করে জল ধরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই জলের চাপেই বেঁকে গেল দুর্গাপুর ব্যারাজের এক নম্বর লকগেট। শুক্রবার ভোরের এই বিপত্তির পরে প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের সেচকর্তাদের দাবি, দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়ায় ওই জলাধারের এই দশা।

‘‘বাম আমলের উদাসীনতা আর এখন কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা। এই জোড়া ফলাতেই এই বিপত্তি,’’ বলছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বিষয়টি দেখছেন। তাঁর নির্দেশে রাতের মধ্যেই গেট মেরামতির চেষ্টা চালানোর জন্য কলকাতা থেকে মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দেওয়ানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন ভোরে এই বিপত্তির পর থেকে বাঁকা গেট দিয়ে হুহু করে বেরিয়ে যাচ্ছে জল। সন্ধ্যাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। জলাধারের জলস্তর প্রতি ঘণ্টায় প্রায় চার ইঞ্চি করে নামছে। এর ফলে দুর্গাপুর শহরে পানীয় জল ও শিল্প কারখানায় জলের জোগান অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে বলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরে। যদিও চিন্তার কোনও কারণ নেই বলেই সেচমন্ত্রীর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘সাময়িক একটা সমস্যা হয়তো হতে পারে। তবে যে-মুহূর্তে লকগেটটি সারিয়ে ফের মূল জলাধার থেকে জল ছাড়া হবে, তখনই ফিডার চ্যানেল ভরে যাবে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’

বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে সেচমন্ত্রী জানান, এ বার বর্ষায় অতিবর্ষণের পরে সেচ দফতর অত্যন্ত পরিকল্পনা করেই জলাধারগুলিতে জল ভরে রেখেছে। দুর্গাপুর ব্যারাজের ওই ফিডার চ্যানেল থেকে ২৪ ঘণ্টায় যে-জল বেরিয়ে যেতে পারে, তা খুব বেশি হলে মূল জলাধারের মজুত জলের ০.২ শতাংশ। জল বেরিয়ে গেলে চাষেরও ক্ষতি হবে না বলেই দাবি মন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘‘এ বার অনেক বেশি জল ধরা রয়েছে।’’

আরও পড়ুন:

দুই মাস্টার প্ল্যানে বন্যা ঠেকানোর চেষ্টা উত্তরে

পক্ষে মোটে ২ প্রভাবশালী, চিন্তায় বিনয়

কিন্তু লকগেট বেঁকে গেল কেন?

মন্ত্রীর বক্তব্য, ১৯৬৪ সালে তৈরির পর থেকে দীর্ঘদিন দুর্গাপুর ব্যারাজের সে-ভাবে কোনও রক্ষণাবেক্ষণই হয়নি। তবে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরপর কয়েক বছর, এমনকী চলতি বছরেও যেটুকু রক্ষণাবেক্ষণের দরকার ছিল, তা করা হয়েছে। মন্ত্রীর অভিযোগ, পলি তোলার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুর ব্যারাজের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। সিডব্লিউপিআরসি-কে দিয়ে সমীক্ষাও করানো হয়েছে। কিন্তু কাজের জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হলেও তা মেলেনি।

সেচকর্তারা জানান, বর্ষার মরসুম শেষ। ব্যারাজের জল এখন নীচের দিকে পাঠানোর প্রয়োজন নেই বলেই গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ব্যারাজের এক নম্বর গেটটি বন্ধ থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। গেটটি তোলার পরে যান্ত্রিক গোলযোগে ঠিকমতো নামেনি। তার পরেই বেঁকে গিয়ে বিপত্তি। তাঁদের আরও অভিযোগ, মাছ ধরার জন্য রাতে গেট যাতে সামান্য তুলে দেওয়া হয়, সেই ব্যাপারে দফতরের নিচু তলার কিছু কর্মীর সঙ্গে স্থানীয় ধীবরদের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। ‘‘দফতরের সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়ে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে,’’ বলেন রাজীববাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE