Advertisement
E-Paper

এ সব বলতে হলে ধর্মতলা যান! চার্জ গঠনের আগে কুন্তলের ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র প্রসঙ্গ থামালেন বিচারক

মঙ্গলবার প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় ৪৭ জন অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হল। এঁদের মধ্যে রয়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল প্রমুখ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৩
নিয়োগ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ।

নিয়োগ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

কলকাতার বিচার ভবনে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জ গঠন শেষ হল। কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডির তদন্তাধীন ওই মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে সোমবার চার্জ গঠন হয়েছিল। মঙ্গলবার ওই মামলায় আরও ৪৭ জন অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হল। এঁদের মধ্যে রয়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল প্রমুখ। সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস-এর নাম। যদিও এই সংস্থার প্রতিনিধি সংস্থাকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।

মঙ্গলবার ফের বিচার ভবনে নিয়োগ মামলায় চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ার শুনানি শুরু হয়। সেখানেই অভিযুক্তদের ভর্ৎসনা করে বিচারক বলেন, ‘‘পার্থ, মানিক, সুজয়, অয়নদের ভূমিকা আছে এই মামলায়। আপনারাও তাঁদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সকলেই বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন। কেউ কেউ অপরাধ থেকে সম্পদ অর্জন করেছেন। তার পর সেই টাকা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে দাবি করেছেন!’’ মঙ্গলবারও আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পেশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। তার ভিত্তিতেই টাকা তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-এর নির্দিষ্ট ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে, পৃথক ভাবে তা পড়েও শুনিয়েছেন বিচারক। তাঁরা দোষী না নির্দোষ, তা-ও শুনতে চাওয়া হয়েছে। চার্জ গঠন শেষে ইডিকে দুপুর ২টোর মধ্যে সাক্ষীদের তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। সেই মতো তিন জনের নাম জমা দিয়েছে ইডি। আগামী ১৪, ২০ ও ২৭ জানুয়ারি ‘ইন ক্যামেরা’ বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে তাঁদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।

মঙ্গলবার চার্জ গঠনের সময় নিজেকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার’ বলে দাবি করেন মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তথা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা নিয়ে কথা বলেছি বলে ফাঁসানো হচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্যই এটা করা হচ্ছে। আমি নির্দোষ।’’ কথার মাঝেই তাঁকে থামিয়ে দেন বিচারক। সরাসরি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে ধর্মতলায় গিয়ে বলুন, এখানে নয়।’’

‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতাও দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। অর্পিতা বলেন, ‘‘কোনও সরকারি পদে ছিলাম না, কিছু জানতাম না। আমি নির্দোষ, স্যর! কোনও অনৈতিক কাজে যুক্ত ছিলাম না। কী উদ্ধার হয়েছে তা-ও জানি না।’’ নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন তাপস মণ্ডলও।

চার্জ গঠন হয়েছে পার্থের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও। বিচারক জানিয়েছেন, পার্থকে সাহায্য করেছেন কল্যাণ। কল্যাণ কয়েকটি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। সেই সূত্রেই দুর্নীতির টাকা সরানো এবং লুকিয়ে রাখার কাজে তিনি সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও বাকিদের মতো কল্যাণও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।

অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে মানিকের স্ত্রী শতরূপার। ২০০৬ সালে শতরূপার নামে একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। ওই অ্যাকাউন্টে দুর্নীতির টাকা ঢুকেছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু তদন্তে দেখা গিয়েছে ওখানে কোনও দুর্নীতির টাকা জমা পড়েনি। চার্জ গঠন হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধেও।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

এর পরেই রয়েছে মানিকের ছেলে সৌভিক ভট্টাচার্যের নাম। বাবার মতোই টাকা লেনদেনে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সৌভিক দু’টি সংস্থা খুলে টাকা লেনদেনে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও সৌভিকের কথায়, এই মামলা থেকে ডিসচার্জ বা অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন তিনি। এখনও অর্ডার হাতে পাননি। তিনিও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।

সোমবার মানিক, পার্থ ছাড়াও প্রোমোটার অয়ন শীল, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’, তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ এজেন্ট সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়েছে আদালতে। সেখানে বিচারকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি করতে গিয়ে ধমক খান প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। এক পর্যায়ে বিচারক তাঁকে বলেন, ‘‘চুপ করে বসুন, না হলে রক্ষীকে ডাকতে বাধ্য হব।’’

প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত এই মামলায় ব্যক্তি এবং সংস্থা মিলে অভিযুক্তের সংখ্যা ৫৪। মামলায় আগেই শুরু হয়েছিল চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া। গত ৩০ ডিসেম্বরের শুনানিতে এই মামলায় নির্দেশ দেওয়ার কথা ছিল আদালতের। কিন্তু চার্জ গঠনের সময়ে অভিযুক্তদের সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়। ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ অসুস্থ হয়ে হাজিরা দিতে না-পারায় আগের দিন চার্জগঠন হয়নি। তার পর সোমবার ‘কাকু’-কে দিয়েই শুরু হয় চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া। ছ’জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। মঙ্গলবার আরও ৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করল আদালত।

Primary Recruitment Case West Bengal Recruitment Case ED Charges framed Kuntal Ghosh Partha Chatterjee Arpita Mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy