Advertisement
E-Paper

অপা ‘একাই ১০০’! কোটি কোটির দুর্নীতি-তদন্তে কার কত সম্পদের হদিস, হিসাব দাখিল করল ইডি চার্জশিট

প্রাথমিক দুর্নীতি মামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ইডির তালিকায় ছিলেন অনেকে। এ ছাড়াও ২৮টি সংস্থা, ট্রাস্ট এবং ফার্মের নামও উঠে এসেছে তদন্তে। সংস্থা এবং ব্যক্তি মিলিয়ে এই মামলায় মোট অভিযুক্ত ৫৪।

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৩৯
(বাঁ দিকে) অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

(বাঁ দিকে) অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রাথমিকের নিয়োগ মামলায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে! বার বার আদালতে এমনই দাবি করেছে তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এই মামলার পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিটে সেই হিসাব দিল ইডি। শুধু তা-ই নয়, কার কাছ থেকে কত নগদ এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তা-ও চার্জশিটে জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি চার্জশিটে দাবি করেছে, প্রাথমিকের নিয়োগ মামলায় এখনও পর্যন্ত দুর্নীতির পরিমাণ মোট ১৫১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা।

প্রাথমিক দুর্নীতি মামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ইডির তালিকায় ছিলেন অনেকে। শুধু ব্যক্তি নন, ২৮টি সংস্থা, ট্রাস্ট এবং ফার্মের নামও উঠে এসেছে তদন্তে। সংস্থা এবং ব্যক্তি মিলিয়ে এই মামলায় মোট অভিযুক্ত ৫৪। এদের মধ্যে গ্রেফতার করে ইডি হেফাজতে নিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য-সহ মোট ছ’জনকে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রচুর নগদ এবং সম্পত্তি।

প্রাথমিক মামলায় সবচেয়ে বেশি টাকার দুর্নীতি হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতার মাধ্যমেই! চার্জশিটের ২০ নম্বর পাতায় ইডি জানিয়েছে, দু’জনের মিলিয়ে দুর্নীতির পরিমাণ ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে। ইডির দাবি, বিভিন্ন সময়ে তল্লাশি করে এখনও পর্যন্ত পার্থ-অর্পিতার নগদ এবং সম্পত্তি মিলিয়ে ১০৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে ২০২২ সালের ২২ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় পার্থের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। একই সঙ্গে অর্পিতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হানা দিয়েছিল। ইডি জানায়, টালিগঞ্জের একটি আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছিল তারা। একই সঙ্গে উদ্ধার হয় প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার গয়নাও। এর পরে ওই বছরেরই ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ার একটি আবাসনে অর্পিতার নামে থাকা দু’টি ফ্ল্যাট থেকেও মোট ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নগদে উদ্ধার করে ইডি। সঙ্গে প্রচুর টাকার গয়নাও। ইডির দাবি, অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদে মোট ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৫ কোটি ৮ লাখ টাকার গয়না উদ্ধার হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, এ ছাড়াও এই দু’জন দুর্নীতির মাধ্যমে ‘উপার্জন’ করেছেন ৪৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ পার্থ ও অর্পিতার মিলিয়ে এই মামলায় ১০৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকার সম্পত্তি এবং নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি অর্পিতার জামিনের আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় তিনি এখন জেলমুক্ত। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন পার্থও। তবে তাঁর জেলমুক্তির আগেই শীর্ষ আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে চার্জ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

পার্থ, অর্পিতার পরেই এই মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে ইডি। শুধু তিনি একা নন, একে একে তাঁর স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্য এবং পুত্র শৌভিকেরও নাম জড়ায় এই মামলায়। পরে তাঁদেরও বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় সংস্থা চার্জশিটে জানিয়েছে, প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি থেকে মানিক এবং তাঁর পরিবারের সাত কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার হদিস পেয়েছে তারা। বর্তমানে তিন জনই জামিনে মুক্ত।

এই নিয়োগ মামলায় প্রাক্তন মন্ত্রী এবং পর্ষদ সভাপতি ছাড়াও কুন্তল ঘোষ, অয়ন শীল এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এজেন্টদের নাম উঠে এসেছে। ইডির দাবি, তাঁদের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে চাকরির বিনিময়ে টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এই তিন জনের মিলিয়ে দুর্নীতির পরিমাণ ১৫ কোটি ৩ লক্ষ টাকা।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এই মামলায় ইডির দেওয়া চতুর্থ অতিরিক্ত চার্জশিটে ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার নাম উঠে আসে। কিন্তু সেখানে এই সংস্থাকে অভিযুক্ত হিসাবে দেখানো হয়নি। ইডির দাবি, ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার অধীনে থাকা আটটি সম্পত্তি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত! যার মূল্য সাত কোটি ৪৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩৪২ টাকা। এ ছাড়াও তল্লাশি করে ৭৬ লক্ষ ১২ হাজার টাকা নগদেরও হদিস মিলেছে। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কালীঘাট রোড এলাকায় সাতটি সম্পত্তি এবং ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের আমতলা মৌজায় একটি পাঁচতলা বাড়ি ও জমির কথা জানিয়েছে ইডি। সেই সম্পত্তি ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার অধীনে। দুর্নীতির টাকা এই সম্পত্তির মাধ্যমে সরানো হয়েছে বলে দাবি ইডির।

‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ ছাড়াও আরও একটি সংস্থার কথা জানিয়েছে ইডি। পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিটে ইডি ‘ইম্প্রোলাইন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার উল্লেখ করেছে। সূত্রের খবর, বকলমে এই সংস্থা তৈরি হয়েছিল পার্থের নির্দেশেই। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি টাকা বিনিয়োগ করতেন। ইডির দাবি, এই সংস্থার মাধ্যমে ১৩ কোটি ৫৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৭৭ টাকা নয়ছয় হয়েছে। পাশাপাশি, পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিটেও ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার কথা উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এই সংস্থার দু’কোটি ৭০ লক্ষের অস্থাবর সম্পত্তিও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এই মামলায় ইডির প্রথম চার্জশিটে পার্থ, অর্পিতার নাম ছিল। ২০২২ সালে সেই চার্জশিট জমা দেয় ইডি। একই বছর দ্বিতীয় চার্জশিট দেয় তারা। সেই চার্জশিটে মানিক, তাঁর স্ত্রী এবং পুত্র ছাড়াও নাম ছিল তাপস মণ্ডলের। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ইডির দেওয়া তৃতীয় চার্জশিটে নাম ছিল কুন্তলদের। চতুর্থ চার্জশিটে অন্যতম অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র নাম ছিল। এ ছাড়াও আরও দু’টি নাম ছিল, যাদের মাধ্যমে টাকা নয়ছয় করা হয়েছিল দাবি করে ইডি।

এই দুর্নীতির তদন্তে বিভিন্ন এজেন্টের নাম উঠে এসেছে নানা সময়ে। ইডির দাবি, অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তুলেছেন তাঁরা। সেই টাকা হাত ঘুরে পার্থ, মানিকদের কাছেও গিয়েছে, এমন তালিকাও পেয়েছে বলে দাবি ইডির। আরও দাবি, এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাপসের থেকে পাওয়া নথিতেও তথ্য রয়েছে। এ ছাড়াও এস বসু অ্যান্ড কোম্পানির মতো সংস্থার মাধ্যমে টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে দাবি করে ইডি। টাকা তুলতে ভুয়ো ওয়েবসাইটেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছিল।

Recruitment Partha Chatterjee Arpita Mukherjee West Bengal Recruitment Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy