Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

গোলাপি টপ আর কালো লেগিঙ্গস-এর উপরে বোরখা পরে এলেন শুভ্রা

একসঙ্গে দু’জনের ছবি সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছে। শুক্রবার দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়েই জেরা করলেন দিল্লি থেকে আসা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তিন কর্তা।

ইডি অফিসে মনোজ কুমার। (ডান দিকে) বোরখায় মুখ ঢেকে বেরিয়ে আসছেন শুভ্রা কুণ্ডু। ছবি: শৌভিক দে।

ইডি অফিসে মনোজ কুমার। (ডান দিকে) বোরখায় মুখ ঢেকে বেরিয়ে আসছেন শুভ্রা কুণ্ডু। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৪
Share: Save:

একসঙ্গে দু’জনের ছবি সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছে। শুক্রবার দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়েই জেরা করলেন দিল্লি থেকে আসা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তিন কর্তা।

এক জন ইডি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মনোজ কুমার, অন্য জন রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডু। সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে জেরা পর্ব চলে। সূত্রের খবর, জেরার জবাবে তিন কর্তা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। মনোজ অবশ্য রাতে হাসিমুখেই দফতর ছাড়েন।

মনোজই ছিলেন রোজ ভ্যালি মামলার মূল তদন্তকারী অফিসার। শুভ্রার সঙ্গে তাঁর মেলামেশার জেরে তদন্ত কোনও ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতেই দিল্লি থেকে এসেছেন ইডি-র কর্তারা। তবে মনোজ নিজে ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, রোজ ভ্যালির প্রায় ১৬০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে শুভ্রা সাহায্য করেছেন। সেই কারণে বিভিন্ন সময়ে জেরা করার প্রয়োজনে শুভ্রার সঙ্গে দেখা করতে হয়েছে।

এ দিন ইডি-র তরফে মনোজকে যেমন সিজিও কমপ্লেক্সে জেরা করা হয়, তেমনই কলকাতা পুলিশের তরফে লালবাজারেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। মনোজ সেখানে হাজির হতে পারেননি। মনোজ ও তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে কলকাতা পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছেন, পুলিশের কাছে এখনই হাজিরা দেবেন না তিনি। কারণ, বিভাগীয় তদন্তের কাজে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন।

আবার শুভ্রাকে যখন ইডি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়, তার উত্তরে তিনি দুপুরে চিঠি দিয়ে জানান, তাঁর পক্ষে আসা সম্ভব নয়। যদিও পরে মত বদলিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে, গোলাপি টপ আর কালো লেগিঙ্গস-এর উপরে বোরখা পরে পিছনের গেট দিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকেন। ইডি সূত্রের খবর, জেরার সময় কান্নাকাটি করেছেন শুভ্রা।

এ দিন শুভ্রা বাড়ি থেকে বেরনোর পরে আবার তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা। এর আগে পর পর দু’দিন কলকাতা পুলিশের তরফে জেরা করা হয়েছে শুভ্রাকে। এ দিন তাঁকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ লালবাজার।

ইডি-র সঙ্গে কলকাতা তথা রাজ্য পুলিশের এই দ্বৈরথ প্রথম নয়। এর আগে বিধাননগর পুলিশ যখন প্রথম সারদা তদন্তে নেমেছিল, তখন সমান্তরাল তদন্ত শুরু করেছিল ইডি। এ নিয়ে ‘ইগো’র লড়াই শুরু হয়। বিধাননগর পুলিশের হেফাজতে থাকা একটি ব্যাঙ্কের লকার আদালতের নির্দেশে জোর করে খোলান ইডি অফিসারেরা। তখন থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রের এই দুই দফতরের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি।

সম্প্রতি একটি হাওয়ালা মামলায় ম্যাঙ্গো লেনে হানা দিয়ে কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা এমন কিছু নথিপত্র পান, যেখানে শুভ্রা ও মনোজের নাম উঠে আসে। ইডি অফিসারদের অভিযোগ, পুরনো শত্রুতার কথা মাথায় রেখে এই সুযোগটাই পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশ শুভ্রা ও মনোজকে নিয়ে আলাদা করে তদন্তে নেমেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টার্মিনালের ভিতরের পাঁচ দিনের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছিল পুলিশ। তার মধ্যে ১৮ জানুয়ারির ফুটেজে বিমানবন্দরে একসঙ্গে মনোজ ও শুভ্রাকে দেখা যায়। ইডি-র একাংশের অভিযোগ, রীতিমতো হিসেব কষে ইডির তদন্তে কালি ছেটানোর জন্যই মনোজ ও শুভ্রার ওই ছবি বাজারে প্রকাশ করে দেওয়া হয়। ঘনিষ্ঠ মহলে মনোজের অবশ্য দাবি, সে দিন তিনি দিল্লি যাচ্ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে বিমানবন্দরে দেখা হয়েছিল শুভ্রার। যদিও সিসিটিভি ফুটেজে তিনি ও শুভ্রা একটি হোটেলের লবিতে বসে কথা বলছেন, এমনটাও দেখা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইডি অফিসে গিয়ে মনোজকে লালবাজারে হাজির হওয়ার নোটিস দিয়ে এসেছিলেন কলকাতা পুলিশের এক অফিসার। শুক্রবার সকালে মনোজ লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, তিনি লালবাজারে যাবেন কি না। ইডি সূত্রের খবর, তাঁকে লালবাজারে যেতে বারণ করা হয়। এর পরে মনোজ এবং ইডি কর্তৃপক্ষ দু’টি আলাদা চিঠি লালবাজারে পাঠিয়ে মোটামুটি ভাবে একই কথা জানিয়ে দেন। বলা হয়, দিল্লি থেকে আসা ইডি কর্তারা তদন্ত করছেন। এই তদন্তের জন্য মনোজের এখন অফিসে থাকা জরুরি। তাই তিনি পরে যাবেন। কবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

চেষ্টা করেও এ দিন মনোজ বা শুভ্রা, কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ED Manoj Kumar Subhra Kundu Rose Valley chit fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE