গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
প্রয়োজনে কাদের থেকে টাকা নেওয়া যেতে পারে অন্য কাউকে দেওয়ার জন্য, সেই তালিকায় শেখ শাহজাহানের পাশে ‘ডাকু’-র নাম লিখেছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই ‘ডাকু’ কে? ইডি জানিয়েছিল, ইনি বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। কিন্তু সম্প্রতি শঙ্কর জানিয়েছেন তিনি ‘ডাকু’ নন। তাঁকে যেন ‘ডাকু’ নামে চিহ্নিত না করা হয়!
রেশন মামলায় গ্রেফতার মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (যিনি বালু নামেও সমধিক পরিচিত) ‘ডাকু’র নাম উল্লেখ করেছিলেন নিজের মেয়েকে লেখা একটি চিঠিতে। সেই চিঠির ভিত্তিতেই ‘ডাকু’র খোঁজ চালিয়ে শঙ্করের সন্ধান পায় ইডি। জানতে পারে, এককালের বনগাঁ পুরসভার প্রধান শঙ্কর তাঁর নিজের এলাকা ডাকু নামেই পরিচিত। এর পরেই ‘ডাকু’ শঙ্করের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ভুয়ো ফোরেক্স সংস্থার সন্ধান পায় ইডি। সেই সব সংস্থায় মন্ত্রী বালুর কালো টাকা সাদা করার সূত্রও পায়। কিন্তু ইডি সূ্ত্রে খবর, হেফাজতে নিয়ে জেরা করার সময় শঙ্কর বার বার ইডিকে বলেছেন, তিনি ‘ডাকু’ নন। তবে কি ভুল লোককে রেশন মামলায় গ্রেফতার করেছে ইডি?
এ কথা ঠিকই, যে ‘ডাকু’ নামের সূত্র ধরে শঙ্করের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। এখন সেই নামটিই যদি তাঁর না হয়, তবে রেশন মামলায় তাঁর গ্রেফতারি নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। যদিও ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, শঙ্কর যে ইডিকে ভুল পথে চালিত করতেই নিজের ‘ডাকনাম’ অস্বীকার করতে চাইছেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ইডি। কারণ, শঙ্করই যে বালুর চিঠির ‘ডাকু’ তার ‘প্রমাণ’ ইডির হাতে আছে।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্করের অপরাধের পুরনো নথি ঘাঁটতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধ কিছু এফআইআর এবং মামলার কাগজপত্র এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। তাতে কলকাতা হাই কোর্টের কিছু মামলার নথিও ছিল। সেই নথিতে দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালের একটি ফৌজদারী মামলার শিরোনামে ইংরেজি হরফে লেখা আছে ‘শঙ্কর (Sankar Addhya) আঢ্য ওরফে শঙ্কর (Shankar Addya) আঢ্য ওরফে ডাকু (Daku) বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং অন্যান্য’। অর্থাৎ শঙ্করের আর এক নাম যে ডাকু, তার প্রমাণ রয়েছে আদালতের নথিতেই।
তবে তা ছাড়াও শঙ্করের ব্যাপারে তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে বহু ফৌজদারি মামলার এফআইআর পাওয়া গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে। এর মধ্যে আর্থিক জালিয়াতি থেকে শুরু করে হত্যার ঘটনা— সবই রয়েছে। কয়েকটি এফআইআর দায়ের করেছে বনগাঁ পুলিশই।
এর পাশাপাশি শঙ্করের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া অজস্র ভুয়ো ফোরেক্স সংস্থার নথিপত্রও রয়েছে ইডির হাতে। শঙ্কর নিজের নামে এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের নামে খুলেছিলেন। সেই সব কোম্পানি মারফৎ অন্তত ২০ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা হওয়ার সূত্রও পেয়েছে ইডি। যার মধ্যে অন্তত ৯-১০ হাজার টাকা মন্ত্রী বালুর বলে ধারণা ইডির।
ফলে ‘ডাকু’ নাম তাঁর নয় বলে শঙ্কর ইডিকে ভুল পথে চালিত করতে চাইলেও সে পথে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে না বলেই অনুমান তদন্তকারীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy