রাতারাতি বদলে গিয়েছে ছবিটা। কয়েকদিন আগেও চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্য ছিল ছিটমহল। কারও উঠোনে, কারও জঙ্গল ঘেরা জমিতে চলত গাঁজা বস্তাবন্দি করার কাজ। পাইপ দিয়ে ভরা হত কাশির সিরাপের বোতল। ঘরে সার দিয়ে বেঁধে রাখা হত গরু। রাত নামলেই সে সব পাচার করা হত সীমান্তের ওপারে। স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল সই হতেই পুলিশি নজরদারি শুরু হয়েছে ছিটমহলে। আধা সামরিক বাহিনীকে নিয়ে পুলিশ টহল দিচ্ছে ছিটমহলে। কোনও অশান্তির খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা। আইনের শাসন শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে বাসিন্দাদের। অন্যদিকে ঘুম ছুটেছে চোরাকারবারীদের।
পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ছিটমহলে কোনও গণ্ডগোল যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। টহলদারি চলছে। দুই কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী এসেছে। আরও আসবে।” ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “কিছু দুষ্কৃতী ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে সেখানকার জমি ব্যবহার করত। পুলিশ সেখানে যাবে না জেনেই এই বাড়বাড়ন্ত ছিল তাদের। এবারে চুক্তি হওয়ার পর পুলিশ টহলদারি শুরু করেছে। চোরাকারবারীদেরও এখন কম দেখা যাচ্ছে ছিটমহলে।”
গত ৬ জুন স্থল সীমান্ত চুক্তি বিলে সই করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। পরের দিন থেকেই ছিটমহলে নজরদারি শুরু করে পুলিশ। চুক্তি হওয়ার পরে পরে মশালডাঙা ছিটমহলে দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা ঘটে। একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে জিনিসপত্র লুঠ করে পালায় দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে একজনকে গ্রেফতার করে। জেলা পুলিশ সুপার, দিনহাটার মহকুমাশাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ ওই এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন।
অভিযোগ, শুধু মশালডাঙা নয়, পোয়াতুর কুঠি, করলা, শিবপ্রসাদ মুস্তাফি, বাকালির ছড়া, নলগ্রাম, ফলনাপুর, জোতনিজাম্মা, বালাপুখুরি সহ বাংলাদেশের বেশ কিছু ছিটমহলে চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম্য চলছিল। পুলিশ এখানে আসবে না জানিয়ে, দুষ্কৃতীরা হুমকি দিত। বেশ কিছু বাসিন্দাকে আবার টাকা দিয়ে তাঁদের উঠোন, জমি ব্যবহার করত দুষ্কৃতীরা। কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ছিটমহলগুলি থেকে সীমান্তের দূরত্ব খুব বেশি নয়। দিনের বেলা দিনহাটা, কোচবিহার থেকে গরু, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র , কাশির সিরাপ, গাঁজা নিয়ে ছিটমহলে মজুত করা হত। রাতে সেগুলি পাচার করা হত। এক বাসিন্দা জানান, প্রথমে তিনি তাঁর বাড়ি লাগোয়া জমিতে গরু রাখায় বাঁধা দেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা হুমকি দেওয়ায় তিনি পিছু হটেন। পরে দুষ্কৃতীরা তাঁকে গরু রাখার জন্য টাকা দেওয়া শুরু করে। চোরাকারবারের আগে এবং পরে দুষ্কৃতীরা তার বাড়িতে আশ্রয়ও নেয়। পুলিশ বা বিএসএফ ছিটমহলের সীমানা পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করলেও কখনও ছিটমহলের ভিতরে যেত না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই দুষ্কৃতীরা সক্রিয় ছিল।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অন্য দেশের অংশ হওয়ায় পুলিশ বা প্রশাসন ওই এলাকায় যেত না। এই সুযোগকে কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। বাসিন্দারাও ভয়ে থাকতেন। কারণ তাঁরা অন্য দেশের মধ্যে একটি অংশে থাকত। তাই তাদের ভয় দেখানো সহজ ছিল।” এ বারে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করায় হাঁফ ছেড়েছেন বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy