পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। জমা পড়ে গিয়েছে খাতাও। এ বার সেই খাতা দেখা শুরু করছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর পঞ্চায়েতগুলির কাজের মূল্যায়ন শুরু করছে চলতি জুলাই মাস থেকেই। প্রশাসন সূত্রে এ-ও খবর যে, এ বার খানিকটা ‘কড়া’ হয়েই খাতা দেখা হবে। উদ্দেশ্য, বিধানসভা ভোটের আগে গ্রামের সরকারকে আরও বেশি করে ‘সক্রিয়’ করা।
২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে রাজ্যের কোন পঞ্চায়েত কেমন কাজ করেছে তারই মূল্যায়ন করবে রাজ্য। প্রতি বছরই নিয়মমাফিক এই মূল্যায়ন হয়ে থাকে। তবে রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বারের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নতুন কিছু সূচক সংযুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয়ের ৫০ শতাংশ জনস্বার্থে খরচ এবং ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের তুলনায় ১০ শতাংশ আয়বৃদ্ধি। পরিকাঠামো উন্নয়নে গতি চাইছে রাজ্য সরকার। যে কারণে কাজের পর্যালোচনা, সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দফতর একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে। তৈরি হয়েছে নতুন পোর্টালও। পঞ্চায়েত দফতরের কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে সেই গতিকেই নিশ্চিত করতে চাইছে রাজ্য।
আরও পড়ুন:
-
বাংলায় বাইরের দেড় কোটি মানুষ থাকেন, তাঁরা তো হেনস্থা হন না! ভিন্রাজ্যে বাঙালি-হেনস্থায় ক্ষুব্ধ মমতা
-
দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিচ্ছেন দিলীপ! আমন্ত্রণ জানায়নি দল, ‘কর্মীদের ডাকে শ্রোতা হয়েই’ হাজির হবেন
-
আউট বুমরাহ, নবম উইকেট পড়ল ভারতের, লড়ছেন জাডেজা, ইংল্যান্ডকে হারাতে শুভমনদের চাই আরও ৪৫ রান
নতুন নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলাশাসকের বক্তব্য, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পঞ্চায়েতগুলি নানা ভাবে আয় করছে। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে সেই টাকা খরচ হচ্ছে না। সেই রোগটাই এ বার কাটাতে চাইছে রাজ্য সরকার।’’ পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘প্রতি বছরই এই মূল্যায়ন হয়। যাকে প্রশাসনিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ইভ্যালুয়েশন’। এ বার সেই প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত ভাবে করা হচ্ছে।’’
রাজ্য সরকার চাইছে বিধানসভা ভোটের আগে এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে যাতে পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরি হয়। উল্লেখ্য, গত রাজ্য বাজেটে সব থেকে বেশি ব্যয়বরাদ্দ হয়েছিল পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন খাতেই। সরকারি ভাবে এর ব্যাখ্যা হল ১০০ দিনের কাজ, গ্রাম সড়ক যোজনার মতো গ্রামীণ এলাকার প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের ‘প্রাপ্য’ আটকে রেখেছে। ফলে নানা বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও রাজ্যকেই নিজেদের কোষাগার থেকে সেই প্রকল্প চালাতে হচ্ছে। তাই গ্রামীণ এলাকার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। তবে যে কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের নেপথ্যেই থাকে রাজনৈতিক সমীকরণ। অনেকের বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, শহর এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করলেও গ্রামের দখল রেখেছে তৃণমূলই। রাজ্যে কমবেশি সব লোকসভা আসনেই পুরসভা এবং পঞ্চায়েত এলাকা রয়েছে। লোকসভা ভোটে বহু জায়গায় দেখা গিয়েছে, একই লোকসভার পুর এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করলেও লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় জয় পেয়েছে তৃণমূল। অনেকের বক্তব্য, সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ‘গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার বাজেট’ তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের কাজের মূল্যায়নে কড়াকড়িতেও তারই প্রতিফলন দেখছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের অনেকে।