উত্তরবঙ্গের চা-বাগানে সংগঠন মজবুত করতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লাকে দলে নিল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের উপস্থিতিতে প্রাক্তন এই বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগদান করেন। নতুন দলে যোগ দিয়েই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেন তিনি। সঙ্গে উত্তরবঙ্গের চা বাগানে তৃণমূলের সংগঠনকে জোরদার করবেন বলেও মত প্রকাশ করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চা-বাগানগুলিতে দাপট বাড়িয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের পর পাল্টা জমি উদ্ধারে নামে শাসক তৃণমূল। সেই পর্যায়ে দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসিকে দিয়ে রাজনীতির জমি উদ্ধারের জন্য চা-বাগানে শ্রমিক সংগঠন বাড়িয়েছে তৃণমূল। সেই আবহে দলবদল করেছেন বিজেপির আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। এমনকি মাদারিহাট বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। এ বার প্রাক্তন সাংসদ জনের দলবদল পদ্মশিবিরের কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র থেকে ২ লাখের বেশি ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছিলেন জন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীকে সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চার জন সংসদ সদস্যকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেয় বিজেপি। সেই অধ্যায়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান জন। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার লোকসভায় প্রার্থীবদল করে বিজেপি। জনের বদলে টিকিট দেওয়া হয় মাদারিহাটের বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্যসচেতক মনোজ টিগ্গাকে। ব্যবধান কমলেও আলিপুরদুয়ার আসনে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী।
আরও পড়ুন:
সেই সময় থেকেই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে জনের। লোকসভা নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুরদুয়ার সফরে গেলে সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। সরকারি অনুষ্ঠান হওয়ায় দলে যোগ দিতে পারেননি তিনি। বৃহস্পতিবার যোগদানের পর জন বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বার দিদির সঙ্গে ফোনেও কথা হয়েছিল আমার। আমি তাঁকে বলেছিলাম দলে এসে কাজ করতে চাই। তিনি আমার অনুরোধ মেনে নিয়েছেন। তাই আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।’’ নিজের দলবদল প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে দায়ী করেছেন জন। তাঁর অভিযোগ, নিজের লোকসভা কেন্দ্রে একটি রেলের হাসপাতাল তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আর্থিক বরাদ্দ হওয়ার পরেও কেন্দ্র থেকে তাঁকে জানানো হয় যে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সংগঠন থেকে এ বিষয়ে আপত্তি করা হয়েছে। তাই হাসপাতালের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জনের আরও দাবি, পরে খোঁজ নিয়ে তিনি জেনেছিলেন শুভেন্দুর হস্তক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে রেলের হাসপাতালটি তৈরি করা যায়নি। অভিযোগের জবাবে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘দলবদলের পর প্রাক্তন সাংসদ আইপ্যাকের তৈরি করে দেওয়া স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী কথা বলছেন। গত এক বছরে তিনি শাসকদলের সঙ্গে যেমন কথা চালিয়ে গিয়েছিলেন, তেমনই আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তাই তাঁর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তির অভিযোগের উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব আমার নয়।’’