টানা অবস্থানের পর এ বার সাত দফা দাবিতে বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযান শুরু করলেন চাকরিহারারা। তাঁদের দাবি, কোনও পরীক্ষা নয়, সরকারকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সসম্মানে তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিকাশ ভবনের সামনে দেখা গেল উত্তপ্ত পরিস্থিতি। মেন গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়লেন চাকরিহারাদের একাংশ। পুলিশের সঙ্গেও বচসায় জড়িয়ে পড়লেন তাঁরা। তাঁরা বিকাশ ভবন ঘেরাও করে রেখেছেন। ভিতরে আটকে রয়েছেন বহু কর্মী। চাকরিহারারা নিজেরা তালা কিনে এনে আটকে দিয়েছেন বিকাশ ভবনের গেট।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের’ সদস্যেরা। সেই মতো বেলা বাড়তে না বাড়তেই বিকাশ ভবনের সামনে জড়ো হন শয়ে শয়ে চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। ক্রমেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মূল ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। এলাকায় প্রচুর পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁরা পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে চাকরিহারারা তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। বেলার দিকে তৃণমূল নেতা তথা বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বিকাশ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছোয়। চাকরিহারাদের কয়েক জন তাঁর দিকে ধেয়ে যান। তাঁকে ধাক্কাও মারা হয় বলে অভিযোগ। ‘চোর, চোর’ স্লোগান ওঠে। সব্যসাচীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন কেউ কেউ। তাঁকে ভিড়ের মধ্য থেকে বার করে নিয়ে যেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। এ বিষয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘‘আমি নিজের কাজে এসেছিলাম। আমি কিছু জানি না। পুলিশ আমায় ঢুকতে বারণ করেছে। ওঁরা এটা আবেগে করছেন। রাজ্য সরকার যা করার করছে। আমরা আদালতের ঊর্ধ্বে নই। আদালত যা বলেছে, তা-ই করছি।’’
বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে চাকরিহারারা জানিয়েছেন, যত ক্ষণ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রী এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং সরকার কী কী পদক্ষেপ করছে তা জানাচ্ছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাবেন তাঁরা। বিকাশ ভবনের কর্মীদের বেরোতে দেওয়া হবে না। তবে তাঁদের খাবার আটকানো হবে না বলেও জানিয়েছেন চাকরিহারারা। পাশাপাশি, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বিকাশ ভবনের সামনে ‘গণ কনভেনশন’-এরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মূলত চাকরিহারাদের সাত দফা দাবি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, সসম্মানে তাঁদের চাকরি ফেরানোর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। রিভিউ-সহ অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরুর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার আগে চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে শিক্ষা দফতরকে। রিভিউয়ের বিষয়েও সরকারকে চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আরও জানানো হয়েছে, একই চাকরির জন্য বার বার যোগ্যতার পরীক্ষা তাঁরা দেবেন না। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারকে স্বতন্ত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করে নতুন প্যানেল প্রকাশ করে বৈধ উপায়ে ‘যোগ্য’দের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র আহ্বায়ক মেহেবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের সসম্মানে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আমরা নতুন করে কোনও নিয়োগের পরীক্ষা দেব না। আমাদের অন্ধকারে রেখে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে সরকার। এর মধ্যে নিয়োগের নয়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে আরও বড় পদক্ষেপ করব আমরা। মুখ্যমন্ত্রীকে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমাদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে।’’ অন্য দিকে, সব্যসাচী ও তাঁর অনুগামীদের শাস্তিও চেয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, ঘেরাও অভিযানের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথনাটিকাও করেছেন চাকরিহারারা। দুপুর সাড়ে ৩ টে নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং বিকেল ৪ টে নাগাদ যাদবপুর এইটবি বাসস্ট্যান্ডের সামনে পথনাটিকা করা হয়েছে।
চাকরি বাতিলের প্রতিবাদে চাকরিহারারা গত মাসের ২১ থেকে ২৪ তারিখ এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছিলেন। এর পর চলতি মাসের ৭ তারিখ থেকে বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন চাকরিহারাদের একাংশ। অন্য দিকে, এসএসসি দফতরের সামনেও অবস্থানের কারণে এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার আচার্য সদনে নিজের অফিসে না গিয়ে বিকাশ ভবনে বসছেন। এর ফলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের স্বাভাবিক কাজকর্মেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষা দফতরের। সেই আবহে বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবন ঘেরাও করলেন চাকরিহারারা।