Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
SSC

SSC: এসএসসি নিয়োগে কেমন ছিল নেতামন্ত্রীদের চাপ, মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন, ‘ফাঁস’ করলেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান

রাজ্যে তৃণমূল সরকার গঠনের পরে চিত্তরঞ্জনই প্রথম এসএসসির চেয়ারম্যান পদে বসেন। দাবি করলেন, খারাপ ব্যবহার করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পার্থকে নিশানা চিত্তরঞ্জনের।

পার্থকে নিশানা চিত্তরঞ্জনের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২২ ১৬:০৫
Share: Save:

তৃণমূল নেতাদের কাছের লোকেদের চাকরি দেওয়ার জন্য অনেক চাপের মুখে কাজ করতে হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে এমনই দাবি করলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। রাজ্যে তৃণমূল সরকার গঠনের পরে তিনিই প্রথম ওই পদে বসেন। ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলানোর সময়ে কী ভাবে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা চাকরির সুপারিশ করে তালিকা পাঠাতেন, তা নিয়েই মুখ খুললেন চিত্তরঞ্জন। জানালেন কী ভাবে চাপে রেখেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একই সঙ্গে জানিয়েছেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু কখনও চাপ দেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিয়ম মেনেই কাজ করতে বলেছিলেন।

সদ্যই এসএসসির নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থকে। একই ভাবে সিবিআই কর্তাদের মুখোমুখি বসতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। বেনিয়মের অভিযোগে চাকরি খুইয়েছেন পরেশ-কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী। এই পরিস্থিতিতে বিস্ফোরক দাবি করলেন চিত্তরঞ্জন। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা অনেক সময়ে গাড়িচালকের হাতে করে তালিকা পাঠিয়ে দিতেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘প্যাডের পর প্যাড, নাম, সই। বড় বড় নেতানেত্রীরা গাড়ির ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপ ছিল।’’

শিল্পমন্ত্রী পার্থ সম্পর্কেও বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন চিত্তরঞ্জন। তিনি যখন এসএসসির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সেই সময়ে অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন না পার্থ। চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘দিন দিন চাপ বাড়তে লাগল। সেই চাপের কাছে আমরা নতি স্বীকার করিনি। তার পরে এক দিন মাননীয় শ্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ডাকলেন। বললেন যে, আপনি ছেড়ে দিন। তখন তিনি তৃণমূলের মহাসচিব ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন, প্রচুর দোর্দণ্ডপ্রতাপ। সহজ ভাবেই বলতে পারতেন। তা হয়নি। তিনি অত্যন্ত দুর্বব্যবহার করেন। আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। দুঃখ নিয়েই আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’ নিজের পদত্যাগের কথা বলতে গিয়ে চিত্তরঞ্জন আরও বলেন, ‘‘আমি যে ইস্তফা দিয়েছিলাম, তাতে কোনও কারণ দর্শাইনি। কিন্তু তার জন্য আমার ইস্তফাপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। বলা হয়নি তুমি এটা লিখে দাও। কারণ, তখন এত তাড়া ছিল যে, তাড়াতাড়ি চলে গেলে আপদ বিদায় হয়।’’

একইসঙ্গে চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘ব্রাত্যবাবু এই ব্যাপারে কখনও আমায় কোনও চাপ দেননি।’’ আর মমতা? চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমায় তাঁর চেম্বারে ডেকেছিলেন। উনি আমাকে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন, কোনও রকমের আপস করবেন না। আপনার সুবিধা মতো বা নিয়মকানুন বাঁচিয়ে রেখে আপনি করে যাবেন।’’ তিনি যে নিয়োগ নিয়ম মানার রাখার চেষ্টা করেছিলেন সেই দাবি করে চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘স্বচ্ছতা আনার জন্য টেট পরীক্ষাতে কার্বনলেস ডুপ্লিকেট ব্যবহার করেছিলাম। যাতে পরীক্ষার্থীরা বুঝতে পারেন যে, আমি যেটা লিখেছি তার ভিত্তিতেই মূল্যায়ন হবে। সেই মতোই নম্বর পাব। ২০১১ সালের শেষ দিকে সম্ভবত পুজোর আগে সেই পরীক্ষা হয়েছিল।’’

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চিত্তরঞ্জনের দাবি, মেধাভিত্তিক নিয়োগ না করার চেষ্টা চলছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কার্বনলেস ডুপ্লিকেট পদ্ধতি তুলে দেওয়াই তার বড় নিদর্শন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSC Partha Chaterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE