গয়নার দোকান, সুদের কারবার, কোনওটাই ভাল চলছিল না। ব্যবসায় মন্দার কথা জানিয়েছিলেন স্ত্রীকেও। তার পরেই স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। তাঁর মৃত্যুর পাঁচ দিন পরে নিজেকে শেষ করে দিলেন ব্যবসায়ী স্বামীও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যবসায়ী দম্পতির আত্মহননের ঘটনায় চাঞ্চল্য হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। তদন্তে নেমে একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ। দাবি, তাতে আত্মহননের কারণ লিখে গিয়েছেন সোনার দোকানের মালিক সুব্রত দাস।
সোমবার সকালে সুব্রতের দেহ উদ্ধার হয় তাঁর বাড়ি থেকে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামবাসীরা পাওনা টাকার জন্য জড়ো হন সুব্রতের দোকানে। তাঁদের দাবি, ভাল সুদের আশায় ব্যবসায়ীর কাছে তাঁরা টাকা জমা রেখেছিলেন। অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং মৃতের দোকানে বিক্ষোভের খবর যায় রাজাপুর থানার পুলিশের কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, উলুবেড়িয়ার খলিশানি মালপাড়ায় একটি সোনার দোকান চালাতেন সুব্রত। ৬৪ বছরের ব্যবসায়ী সুদের কারবারও করতেন। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা ব্যাঙ্কের চেয়ে বেশি সুদের আশায় টাকা জমা রাখতেন তাঁর কাছে। কেউ পঞ্চাশ হাজার টাকা, তো কেউ এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা রেখেছিলেন। তাই ব্যবসায়ীর আচমকা মৃত্যুতে মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের।
পরিবার সূত্রে খবর, সোমবার সকালে সুব্রতকে বাড়ির ছাদে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। চিকিৎসক তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তার পরেই ভিড় জমে যায় সুব্রতের দোকানের সামনে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, বেশ কিছু দিন ধরে আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। ছোট ছোট ডায়েরিতে টাকা লেনদেনের হিসাব লিখে রাখতেন। সেগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। তা ছাড়া মৃত ব্যবসায়ীর শার্টের বুকপকেট থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের দাবি, তাতে আর্থিক অনটনের কথা লিখে গিয়েছেন সুব্রত।
আরও পড়ুন:
জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে স্ত্রীকে নিজের পরিস্থিতির কথা বলার পরে আত্মহত্যা করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পাঁচ দিন পর নিজেকে শেষ করে দিলেন ব্যবসায়ী। মৃতের পুত্র শুভাশিস দাস একটি ওষুধের দোকান চালান। তিনি বলেন, ‘‘মায়ের মৃত্যুর দু’দিন আগে আমরা জানতে পেরেছিলাম বাবার ব্যবসায় মন্দা চলছে। কিন্তু এ রকম যে কিছু ঘটতে চলেছে কেউ কল্পনা করতে পারিনি।’’
অন্য দিকে, আমানতকারীরা টাকার জন্য তাগাদা দেওয়া শুরু করেছেন। ছোট ছোট ডায়েরি হাতে কেউ কেউ বিক্ষোভ দেখান। মৃতের পুত্রের দাবি, তিনি বাবার ব্যবসার খবর রাখতেন না। ঠিক কী হয়েছে, তা তিনি জানেন না। তবে তিনি শুনেছেন শেষের দিকে বাবা টাকার জন্য লটারির টিকিট কাটতেন। রাজাপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে।