ফয়জুদ্দিন শেখ। নিজস্ব চিত্র
কাশ্মীরে নিহত শ্রমিকের দাফন শেষ হয়েছে সদ্য। সেই মাঠ থেকে ফিরে এসে চুপ করে দাওয়ায় বসে আছেন তিনি। কিছু কি মনে পড়ছে? বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটিতে আঁকিবুঁকি কাটার ফাঁকে ফয়জুদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘অমন ছবির মতো দেশে এমন খুন করার সাধ জাগে কী করে বলুন তো!’’ তার পর খুব ধীরে ধীরে বলছেন, ‘‘চোখ রাঙিয়ে আমাদেরও দাবানো যাবে না। পেটের জ্বালা বাবু, আমরা আবার যাব কাশ্মীরে।’’
নব্বইয়ের দশকে যখন কাশ্মীরের আপেল বাগানে যাতায়াত শুরু হল শ্রমিকদের, সেই তালিকায় প্রথমেই ছিলেন ফয়জুদ্দিন। এখনও মনে পড়ে তাঁর, ‘‘সেটা সম্ভবত ১৯৯০ সাল। আমার পনেরো-ষোলো বছর বয়স। খুব শীত ওখানে, কিন্তু আমার তো কোনও সোয়েটার ছিল না। ওইটুকু ছাড়া আর কোনও কষ্ট ছিল না। কোনও অশান্তিও না।’’
বাহালগ্রামের সঙ্গে কাশ্মীরকে সুতোয় বেঁধে ফেলা সেই পরিয়ায়ী শ্রমিকের তালিকায় প্রথম নাম ছিল তাঁরই। সে সময়ে, একশো টাকা রোজে আপেল বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন তাঁরা। বলছেন, ‘‘ভাবতে পারেন, সে সময়ে এখানে দিনমজুরিতে বড়জোর কুড়ি টাকা মিলত। পাঁচ গুণ আয়ের হাতছানি কি ছাড়া যায়!’’
ফয়জুদ্দিনের হাত ধরেই তাই পরের বছর কাশ্মীরে পাড়ি দিয়েছিলেন আরও অন্তত দশ-বারো জন। ক্রমে বাড়তে থাকা আপেল-শ্রমিকের সংখ্যা। দু’মাসের জন্য পরিযায়ী সেই মানুষেরা প্রায় হাজার পঞ্চাশ টাকা আয় করে ফিরে আসেন প্রান্তিক গ্রামে। ২০১০ সাল থেকে সংখ্যাটা বেড়ে এখন অন্তত আড়াইশো মানুষ ধান রুয়ে বাহাল গ্রাম থেকে পাড়ি দেন কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে।
পরিস্থিতি অশান্ত বলেই এ বার সেই সংখ্যাটা ছিল কিঞ্চিৎ কম। ফয়জুদ্দিন বলছেন, ‘‘না হলে, এ বারেও শোপিয়ান, পুলওয়ামা, চিত্রাগাঁও ছুটতেন সকলে।’’ তিনি জানান, কাশ্মীরের বহু জায়গায় কাজ করেছেন তিনি। কখনও কোথাও সমস্যা হয়নি। সমস্যা হলে বাগান মালিকেরা বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন। আর্থিক সমস্যায় পড়লে টাকাও ধার দিয়েছেন। দু-আড়াই মাসের কাজ শেষে বাড়তি আয় আর স্বপ্ন নিয়ে ঘরে ফেরা।
ফুলবাড়ির বাখের আলি ২২ বছর ধরে কাশ্মীরে আপেলের বাগানে কাজ করেন। শোপিয়ান এলাকায় গুলজার হোসেনের বাগানে কাজ করেন তিনি। তার বাড়িতেই থাকেন। বলছেন, “এ বার পরিস্থিতি খারাপ ছিল, তাই যাইনি। কিন্তু এ অবস্থা তো চিরকাল থাকবে না। ফের যাব কাজে। অমন সুন্দর দেশে না গিয়ে পারা যায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy