Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কারণ খুঁজে পাচ্ছে না রিয়ার পরিবার

সোমবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় বছর উনিশের রিয়া দে-র দেহ। রিয়ার বাড়ি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের বনমালীপুর গ্রামে।

হাহাকার: দিদির মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে বোন। সোমবার বিষ্ণুপুরের বনমালীপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

হাহাকার: দিদির মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে বোন। সোমবার বিষ্ণুপুরের বনমালীপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ অধিকারী
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৫
Share: Save:

ইচ্ছা ছিল নার্সিং পড়ার। সেই সুযোগও পেয়েছিলেন। তার পরেও কেন আত্মহত্যা করবেন রিয়া, বুঝে উঠতে পারছেন না পরিজনেরা।

সোমবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় বছর উনিশের রিয়া দে-র দেহ। রিয়ার বাড়ি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের বনমালীপুর গ্রামে। স্থানীয় মানিকলাল সিংহ স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮৭.৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন তিনি। তার পরে ভর্তি হন পাত্রসায়রের বালসি হাইস্কুলে। ২০১৮ সালে ৮৯.২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। বালসি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ কোনার বলেন, ‘‘মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতো মেয়েটি। ইলেভেনের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। তখন থেকেই নার্সিং-এর কথা বারবার বলত। মিশুকে স্বভাবের ছিল। সব সময় হাসিখুশি থাকত।’’

কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের পরে, নার্সিং-এ ভর্তি হতে পারেননি রিয়া। ভর্তি হন বর্ধমান মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ভূগোলে অনার্স নিয়ে। এ বছর স্বল্প মেয়াদের ‘অগজ়িলিয়ারি নার্সিং মিডওয়াইফারি’ (এএনএম) প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। ভর্তি হন বর্ধমানের ওই নার্সিং স্কুলে। রিয়ার জেঠতুতো দাদা মনসারাম দে জানান, তার সপ্তাহ দু’য়েক পরেই তিন বছরের ‘জেনারাল নার্সিং মিডওয়াইফারি’ (জিএনএম) কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আসে। কোর্স বদল করবেন কি না, তা নিয়ে রিয়া কিছুটা দোলাচলে ছিলেন বলে জানাচ্ছেন তিনি। রিয়ার স্কুলের এক সহপাঠী জানাচ্ছেন, কালীপুজোর সময়ে তাঁদের দু’জনের শেষ দেখা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এএনএম নার্সিং-এ জেলার মধ্যে চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকে। তাই ওই কোর্স নিয়ে মোটের উপরে সন্তুষ্টই ছিল রিয়া।’’

তার পরেও কেন এই ঘটনা ঘটল, সেই ধোঁয়াশা কাটছে না কিছুতেই। রিয়ার দাদা চণ্ডীচরণ দে বলছেন, ‘‘মনের মধ্যে হতাশা থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ কিন্তু কীসের হতাশা, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা তাঁদের। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে রিয়ার বাবার মোবাইলে প্রথমে একটি ফোন আসে। তাঁকে বলা হয়, মেয়ে অসুস্থ। বাবা-মা বাসে চেপে রওনা হন। রিয়ার এক মামা থাকেন বর্ধমানে। তাঁকে ফোন করে রিয়ার খোঁজ নিতে বলা হয়। রিয়ার মৃত্যু হয়েছে জেনে তিনিই সেই খবর দেন বাড়িতে। সোমবার দুপুরে বনমালীপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, রিয়ার বোন রিম্পা ভেঙে পড়েছে। মানিকলাল সিংহ স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে সে। রিম্পা জানায়, রবিবার দুপুরে দিদির সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। বাবা-মার খাওয়া হয়েছে কি না, বোনের পড়াশোনা কেমন চলছে— এই সমস্ত খোঁজ নিয়েছিলেন রিয়া। খবর পেয়ে এ দিন বনমালীপুরে চলে এসেছেন রিয়ার খুড়তুতো ভাই সুমন দে। তিনি জানান, শুক্রবার দিদির সঙ্গে শেষ কথা হয়।

মনসারাম জানাচ্ছেন, কোতুলপুরের নার্সিং ছাত্রী সমাপ্তি রুইদাসের মৃত্যুর খবর ছিল রিয়ার কাছে। এ দিন রিয়ার মৃত্যুর খবর পৌঁছেছে কোতুলপুরেও। তাজপুর রামচরণ হাইস্কুলের ছাত্রী ছিলেন সমাপ্তি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌরভ সিংহ রায় জানান, দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মেয়েদের নাটকে অভিনয় করেছিলেন সমাপ্তি। সবার শেষে পরিচারিকার একটি চরিত্র পড়েছিল। কেউ তাতে অভিনয় করতে চাইছিল না। সমাপ্তিকে দেওয়া হয়। আর সেই ভূমিকাতেই তিনি অভিনয় করে পুরস্কার পান।

সৌরভবাবু বলেন, ‘‘কোনও কিছুতেই পিছ পা হত না মেয়েটি, আর সাত চড়ে রা কাড়ত না। ওর সঙ্গে কী হল, সেটা জানা দরকার।’’ ওই স্কুলেরই শিক্ষক উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামগঞ্জের মেয়েরা নিশ্চিত চাকরির আশায় নার্সিং পড়তে যায়। পর-পর এমন ঘটনা খুবই উদ্বেগের। প্রত্যেকটির গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur Nursing Student Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE