Advertisement
E-Paper

কেমো নিতে বেরোচ্ছিলেন, হঠাৎ বাড়িতে ইডি! ‘ভুল’ সন্দীপের পরিবার হেনস্থার সঙ্গে দেখছে সম্মানহানিও

কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে অপরিচিত কয়েক জন গাড়ি নিয়ে ঢোকার পর এলাকাবাসীর মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়। ধুলো উড়িয়ে ইডির গাড়ি গিয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সন্দীপ সাধুখাঁর বাড়িতে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৭
ভুল সাধুখাঁর বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সঙ্গে যান জওয়ানরা।

ভুল সাধুখাঁর বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সঙ্গে যান জওয়ানরা। —নিজস্ব চিত্র।

কী ভাবে এমন ‘ভুল’ হয়! এক জন ক্যানসার রোগীর বাড়িতে ‘ভুল’ করে ইডি চলে এল! কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের ‘ভ্রান্তি’ নিয়ে এমনই সব আলোচনা চলছে হুগলির ময়নাডাঙায়। পঞ্চায়েতকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে বেরিয়ে কী ভাবে ব্যবসায়ীর বাড়িতে চলে গেলেন ইডি আধিকারিকেরা? প্রশ্ন তুলেছেন সন্দীপ সাধুখাঁর পরিবার। তাদের অভিযোগ, ইডির ভুলে তাদের সামাজিক সম্মান ধুলোয় মিশে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’র তদন্তে নেমে মঙ্গলবার সকালে ইডির একটি দল পৌঁছয় হুগলির চুঁচুড়া স্টেশন সংলগ্ন ময়নাডাঙা এলাকায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে অপরিচিত কয়েক জন গাড়ি নিয়ে ঢোকার পর এলাকাবাসীর মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়। তার মধ্যেই ধুলো উড়িয়ে ইডির গাড়ি গিয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সন্দীপ সাধুখাঁর বাড়িতে। দরজায় টোকা দিয়ে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। তাতে প্রথমে চমকে যান ওই পরিবারের সকলে। খানিক ক্ষণ পরে ভুল ভাঙে ইডির। আধিকারিকেরা বুঝতে পারেন তাঁরা অন্য সন্দীপের বাড়িতে চলে এসেছেন। গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যান ধনেখালির রাস্তায়।

ময়নাডাঙার সন্দীপের একটি লজেন্সের কারখানা আছে পোলবার মহেশপুর এলাকায়। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত সন্দীপের ওই কারখানা এখন ঢিমে তালে চলে। এক সময় ২১ জন কর্মচারী ছিলেন। বর্তমানে কাজ করেন সাত জন। ইডির ভুল নিয়ে সন্দীপের ছেলে শুভদীপ সাধুখাঁ বলেন, ‘‘সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ইডি আমাদের বাড়িতে আসে। অফিসাররা নিজেদের পরিচয়পত্র দেখান। আমার বাবার নাম জানতে চান। তিনি কী করেন জানতে চান। আমি জবাব দিই। কিন্তু বাবা তো অসুস্থ! আর আমার বাড়িতে ইডি আসার কারণ জানতে চাই। বেশ কিছু ক্ষণ পর ইডি অফিসাররা বললেন, তাঁদের ভুল হয়েছে। তার পর সোজা বেরিয়ে যান তাঁরা।’’ এক নিশ্বাসে ওই কথাগুলো বলার পর শুভদীপ অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘কিন্তু তত ক্ষণে তো বাড়ির সামনে ভিড় জমে গিয়েছে। লোকজন উৎসুক হয়ে জানতে চান কী হয়েছে। কত জনকে জবাব দেব! আমাদের তো একটা সামাজিক সম্মান আছে। সে কথা ইডি ভাবল না!’’

ইডির ভুল ভাঙে নাকি ব্যবসায়ী সন্দীপ সাধুখাঁর বাবার নাম জিজ্ঞেস করার পর। ময়নাডাঙার সন্দীপবাবুর বাবার নাম শচীন সাধুখাঁ। আর যাঁর বাড়িতে ১০০ দিনের কাজে ‘দুর্নীতি’র তদন্ত করতে ইডি যাচ্ছে, সেই সন্দীপের বাবার নাম অমল সাধুখাঁ। তাঁরা চন্দননগরের বাসিন্দা। পরে হরিদ্রা পঞ্চায়েতের কর্মীর বাড়িতে পৌঁছে ইডি আধিকারিকেরা নাকি প্রথমেই জিজ্ঞেস করে নেন সন্দীপের বাবার নাম কী। তবে ‘ভুল’ সন্দীপের বাড়িতে ইডির অভিযান নিয়ে বিরক্ত পরিবার। হতবাক হয়েছেন ব্যবসায়ীর প্রতিবেশীরা। চিন্ময় বোস নামে এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘অবাক কাণ্ড! ইডি যাকে খুঁজছে, তার বাড়ির ঠিকানা ঠিক মতো জানে না? সন্দীপবাবু এক জন সজ্জন মানুষ। ওঁর কারখানা আগে ভাল চলত। বর্তমানে অবস্থা খুব একটা ভাল না। ওঁর ছেলে অবশ্য চাকরি করেন।’’ দীপক সাহা নামে আর এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘সন্দীপের বাড়িতে ইডি আসায় ভীষণ অবাক হয়েছি। ও তো লজেন্সের ব্যবসা করে বলেই জানি।’’

কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সুকান্ত ঘোষ ইডির এই ভুলের জোর সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা নিশ্চয়ই জেনেশুনে ‘রেড’ করেছে। কিন্তু তার পর কী ভাবে এক জন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে গেলেন ওঁরা? উনি কেমো নিতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁর বাড়িতে গিয়েছে ইডি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সামাজিক সম্মানের একটা ব্যাপার তো আছে! ইডির উচিত সঠিক তথ্য নিয়ে যাওয়া।’’

ED Raids 100 days' work ED Hooghly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy