Advertisement
E-Paper

নতুন রূপ নিয়ে হাজির ডেঙ্গি, বাড়ছে আতঙ্ক

যা তাঁদের বিচারে আগের বছরগুলির তুলনায় বেশি ক্ষতিকর। আপাতত একে ডেঙ্গি নিউ১ বলে চিহ্নিত করছেন তাঁরা।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৬
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নতুন শত্রু। তাই অজানা এবং বিপজ্জনকও।

ডেঙ্গির চারটি ধরনের সঙ্গে এত দিন পরিচিত ছিলেন চিকিৎসক-গবেষকরা। আগের বছরগুলিতে সেই ধরন চারটিই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে হানা দিচ্ছিল। কিন্তু এ বার কিছু দিন ধরে তাঁদের সামনে আসছে এই রোগের নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য। যা তাঁদের বিচারে আগের বছরগুলির তুলনায় বেশি ক্ষতিকর। আপাতত একে ডেঙ্গি নিউ১ বলে চিহ্নিত করছেন তাঁরা।

এখনও পর্যন্ত পরীক্ষানিরীক্ষায় এ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য না মিললেও আপাতত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এর সঙ্গে মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। যদিও প্রশাসনিক তরফে গোড়া থেকেই বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। চিকিৎসকেরা অবশ্য সাবধান করে বলছেন, চোখ বন্ধ করে থাকলে প্রলয় আটকানো যায় না।

এখনও পর্যন্ত এই নতুন সেরোটাইপ সল্টলেক, লেকটাউন ও দমদমের কিছু অংশে সক্রিয় বলে চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, কিছু বোঝার আগেই একাধিক রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই তথ্য স্বীকার করছেন অন্য জায়গার চিকিৎসকরাও। যেমন, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে মেডিসিন-এর চিকিৎসক উদাস ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতার লাগোয়া ওই তিন এলাকা থেকে যা তথ্য আসছে তা খুব খারাপ। আগের রাতে দেখা গেল প্লেটলেট এক লক্ষ ১০ হাজার। পর দিন সকালেই ২৫ হাজার। এটা খুব অস্বাভাবিক। যাদের দ্বিতীয় বার ডেঙ্গি হচ্ছে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা প্রাণঘাতী।’’ দেগঙ্গাতেও এই নয়া ডেঙ্গিই হানা দিয়েছে কিনা, চর্চা চলছে তা নিয়েও।

চিকিৎসকেরা অনেকেই বলছেন, ভাইরাসের অ্যান্টিজেনিক কাঠামো না দেখে নতুন সেরোটাইপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কবে সেই পরীক্ষানিরীক্ষা হবে তার জন্য বসে থাকলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। ক্রিটিকাল কেয়ার-এর চিকিৎসক সৌরেন পাঁজা যেমন বললেন, ‘‘চারপাশের পরিস্থিতি দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, নতুন সেরোটাইপ খুবই সক্রিয়। জ্বরের চার-পাঁচ দিনের মাথায় ‘ক্যাপিলারি লিক সিনড্রোম’ দেখা দিচ্ছে অনেকেরই। অর্থাৎ রক্তজালিকা ফেটে যাচ্ছে। টিসুতে জল জমছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, এর জেরে রক্তচাপ দ্রুত নামছে। রক্তের ঘনত্ব বাড়ছে। প্রস্রাব কমে যাচ্ছে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে কিছু করার থাকছে না।

একই বক্তব্য মেডিসিন-এর চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারেরও। তাঁর মতে, নতুন টাইপই সর্বনাশটা ঘটাচ্ছে। অন্যান্য সংক্রমণের সাঁড়াশি বিপদ ডেকে আনছে।

কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর চিকিৎসক বিভূতি সাহা জানিয়েছেন, নতুন সেরোটাইপ সম্পর্কে কোনও পরীক্ষিত প্রামাণ্য তথ্য তাঁর কাছে নেই। তবে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরের দিনগুলি নিয়েই এ বার তাঁরা বেশি চিন্তিত। তাঁর কথায়, ‘‘একে বলে ‘এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গি সিনড্রোম’। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ভাইরাস আক্রমণ করছে। কখনও মস্তিষ্ক, কখনও লিভার, কখনও হার্ট, কখনও বা কিডনি। সময়ে ব্যবস্থা না নিলে বড় বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে।’’

অন্য দিকে শিশু রোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানালেন, শুধু জ্বরের পরে নয়, কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গি রোগীর অবস্থা দু’তিন দিনের মাথাতেই আচমকা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে, শক-এ চলে যাচ্ছে। তাই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে খুব বেশি উপসর্গের জন্য অপেক্ষা না করে গোড়াতেই ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু এই পরামর্শ প্রশাসনের কানে কতটা পৌঁছচ্ছে, সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। যেমন, সল্টলেকের মেয়র সব্যসাচী দত্তর দাবি, সল্টলেকে এ বার ডেঙ্গি অনেক কম। দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট বলেছেন, ‘‘এখানে ডেঙ্গির তেমন প্রকোপই হয়নি।’’ যে দক্ষিণ দমদম পুরসভায় এই মরসুমে পরপর ডেঙ্গিমৃত্যু ঘটছে, তার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তাঁরা নতুন সেরোটাইপের কথা শুনছেন ঠিকই, কিন্তু নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ না থাকায় এখনই সে নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছেন না।

ফ্লুইড গাইডলাইন

শুধু প্লেটলেটের দিকে নজর রাখা নয়, শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক রাখাটাও ডেঙ্গির সঙ্গে মোকাবিলার অন্যতম শর্ত। জ্বর এবং তার পরের কয়েক দিন সাধারণভাবে দেহের ওজন অনুযায়ী জলীয় পদার্থের প্রয়োজনীয়তা ঠিক হয়। দেহের প্রতি কিলোগ্রাম ওজন পিছু ১০০ মিলিলিটার জল খাওয়াতে পারলে ঝুঁকি অনেকটাই কম থাকে। শুধু জল নয়, ফলের রস, ডাবের জল, ওআরএস, নুন-লেবু-চিনির শরবত, সব্জির স্যুপও চলতে পারে।

জ্বরের পরে কী কী হলে সতর্ক হবেন

পেটে ব্যথা, সব সময়ে ক্লান্তি

মাথা ভার হয়ে থাকা

ঘন ঘন বমি কম পরিমাণে, অনিয়মিত প্রস্রাব

মহিলাদের হিসেবের বাইরে আচমকা ঋতুস্রাব

Dengue Malaria ডেঙ্গি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy