E-Paper

ছুটির ফাঁদে পড়াশোনা, চিন্তা পাঠ্যক্রম সময়ে শেষ করা নিয়ে

গোটা নভেম্বর জুড়ে ক্লাস হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ, নভেম্বরের ৩ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে স্কুলগুলিকে মাধ্যমিকের টেস্ট নিতে হবে। টেস্টের সময়ে একই সঙ্গে পরীক্ষা ও ক্লাস নেওয়ার পরিকাঠামো সব স্কুলে না থাকায় সে সব স্কুলে পঠনপাঠন হবে না।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৪৮

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির তৃতীয় সামেটিভ বা তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের আগে ক্লাস হওয়ার কথা চার মাসের কাছাকাছি। শিক্ষকদের অভিযোগ, নানা কারণে স্কুল ছুটি থাকায় তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের আগে ক্লাস নেওয়ার জন্য টেনেটুনে দু’মাস সময় পাচ্ছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে স্কুলগুলি পাঠ্যক্রম শেষ করতে পারবে না বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ শিক্ষক। তাঁদের বক্তব্য, তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই পাঠ্যক্রম যাতে শেষ করা যায়, তার জন্য কেন আগে থেকে পরিকল্পনা করে যথেষ্ট সময় দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ পুজোর ছুটির পরে স্কুল খুলছে ২৫ অক্টোবর। কিন্তু তা নামেই স্কুল খোলা। কারণ, সোম ও মঙ্গল ফের ছটের জন্য স্কুল ছুটি। অর্থাৎ, শনিবার খোলার পরেই আবার রবিবার ধরে টানা তিন দিন স্কুল ছুটি থাকবে। তাঁরা আরও জানালেন, এ বার কলকাতায় অতিবৃষ্টির কারণে রাজ্য জুড়ে সমস্ত সরকারি স্কুলেই পুজোর ছুটি এগিয়ে এসেছিল। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে পুজোর ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে প্রায় পুরো অক্টোবর, দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে স্কুলের ক্লাস শুরু হবে কার্যত নভেম্বর থেকে।

কিন্তু গোটা নভেম্বর জুড়ে ক্লাস হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ, নভেম্বরের ৩ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে স্কুলগুলিকে মাধ্যমিকের টেস্ট নিতে হবে। টেস্টের সময়ে একই সঙ্গে পরীক্ষা ও ক্লাস নেওয়ার পরিকাঠামো সব স্কুলে না থাকায় সে সব স্কুলে পঠনপাঠন হবে না। এ ছাড়া, নভেম্বরে বিধানসভা ভোটের আগে বিএলও-র ডিউটি পড়ছে বহু শিক্ষকের। সেই শিক্ষকেরা বিএলও-র কাজ করে ক্লাস কতটা নিতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এ দিকে, পয়লা থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন নিতে বলেছে শিক্ষা দফতর।

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছিল গত অগস্টের প্রথম সপ্তাহে। শেষ হয়েছিল ওই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। যার ফলে অগস্টের ১৫ দিন এবং সেপ্টেম্বরের ২৩ দিন মিলিয়ে এক মাসের কিছু বেশি দিন ক্লাস হয়েছে। এর পরে প্রায় পুরো অক্টোবর ছুটি। নভেম্বরেও নানা কারণে সব ক্লাস হবে না। যার অর্থ, সব মিলিয়ে পড়ুয়ারা ক্লাস করার সুযোগ পেল বড়জোর দু’মাস। ‘অল পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক চন্দন গড়াই বললেন, ‘‘এত কম সময়ে কী ভাবে পাঠ্যক্রম শেষ হবে? সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ কলকাতায় দুর্যোগ হল। তার জন্য সারা রাজ্যে পুজোর ছুটি এগিয়ে এল কোন যুক্তিতে? ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে কেন সর্বত্র ছুটি পড়ে গেল? ক্লাসের ক্ষতি না করে ভোটের বিএলও-র ডিউটি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা কার্যক্ষেত্রে কতটা সম্ভব?’’

‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের কথায়, ‘‘প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের থেকে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের গুরুত্ব অনেক বেশি। ওই মূল্যায়নে প্রতিটি বিষয়ের নম্বর প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের থেকে বেশি থাকে। তাই তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের আগে আরও বেশি ক্লাস হওয়া দরকার। কেন শিক্ষা দফতর বছরের শুরুতে ছুটির পরিকল্পনা (রস্টার) করে না? শুধু পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিই নয়, দশম শ্রেণির টেস্ট নভেম্বরের গোড়ায় শুরু হয়ে যাওয়ায় দশমের পড়ুয়ারাও ক্লাস করার সুযোগ খুব কম পাবে।’’

এই বিষয়ে শিক্ষা দফতরের কোনও কর্তা অবশ্য মন্তব্য করেননি। তবে, কারও কারও মতে, স্কুল ছুটি থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠ্যক্রম শেষ হওয়া নিয়ে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Education system syllabus

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy