উদ্বিগ্ন: মিছিলে সাঁকরাইলের মহিলা দর্জিরা। বুধবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র
এর আগে কখনও কোনও মিছিলে পা মেলাননি ওঁরা। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় এ বার ওঁরাও পথে হাঁটলেন। হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের বিভিন্ন এলাকার প্রায় শ’দুয়েক মহিলা বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পা মেলান।
ওই ব্লকের প্রায় প্রতিটি বাড়ির সদস্যেরা দর্জির পেশার সঙ্গে যুক্ত। সেখানে পরিবারের পুরুষদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মেয়েরাও। গত কয়েক বছর ধরে সাঁকরাইল ব্লকের পাঁচপাড়া এবং সংলগ্ন গ্রামের শ’দুয়েক মহিলা মিলে পাঁচটি ছোট ছোট গোষ্ঠী গড়ে সেই কাজ করে চলেছেন। এ রকমই এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা মুর্শিদা বেগমের অভিযোগ, ‘‘নোট বাতিল, জিএসটি চালু হওয়ার ফলে ব্যবসায় অনেকটা ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। পাঁচ পুরুষ ধরে পাঁচপাড়ায় রয়েছি। এখন শুনছি, বাড়ির যাবতীয় দলিল, কাগজপত্র নাকি জোগাড় করতে হবে। কিন্তু সে সব এখন কোথায় পাব?’’ ওঁদের কারও হাতে ‘নো এনআরসি, নো ক্যাব’ লেখা ব্যানার, কারও বা বুকে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পোস্টার ঝোলানো।
বুধবার ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভাষণ শুনছিলেন ওঁরা। আজ কেন মিছিলে হাঁটতে হল? প্রশ্নটা শুনেই রাগ না সামলে হালিমা বেগম বলে ওঠেন, ‘‘অর্ধেক জীবন তো পার করে ফেললাম। এত দিন ভালই ছিলাম। আর কী ভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে আমাদের?’’ হালিমার সঙ্গী সাহানারা বেগমের কথায়, ‘‘আমরা গরিব। কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী নই। কিন্তু এই অবস্থায় দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই সব কাজ ফেলে হাওড়া থেকে হাঁটলাম।’’ নোটবন্দির সময়ে তাঁদের দুর্দশার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাহানারা বলছিলেন, ‘‘খুব কম টাকা রোজগার করি আমরা। কিন্তু নোটবন্দি এবং জিএসটি চালু হওয়ার ফলে আমাদের মতো ছোটখাটো দর্জিদের অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এ বার আমাদের দেশ থেকে তাড়ানোর আইন পাশ করছে! কিন্তু মরলে সাঁকরাইলেই মরব। তবু এখান থেকে নড়ব না।’’
আরও পড়ুন: প্রতিবাদ সভার ফলে যানজটের আশঙ্কা আজও
ডোরিনা ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে মুর্শিদা, হালিমা, সাহানারাদের কথা শুনছিলেন আন্দুলের লিপি চক্রবর্তী, মোনালিসা গোস্বামী বা রুনু চট্টোপাধ্যায়রা। ওঁদের বক্তব্যকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে লিপি বললেন, ‘‘ওঁদের তৈরি করা কাপড়ই তো সবাই পরছি। সে সব রাজ্যের বাইরেও যাচ্ছে। আরও অনেকের সঙ্গেই ওঁদেরও ক্ষতি করে এমন নয়া আইন কিছুতেই সমর্থন করছি না।’’
আরও পড়ুন: তৃতীয় দিনের মিছিলে থমকাল মধ্য কলকাতা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy