পুজোর মুখে দক্ষিণ ভারত বেড়াতে গিয়ে চলন্ত বাসের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল দুই মহিলা-সহ এই রাজ্যের পাঁচ ভ্রমাণার্থীর। গুরুতর জখম হয়েছেন ছ’জন।
শনিবার গভীর রাতে তামিলনাড়ুর রমানাথপুরম জেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। রামেশ্বরম মন্দির দেখে মোট ৭৮ জনের দলটি বাসে চেপে ইস্ট কোস্ট রোড ধরে কন্যাকুমারী যাচ্ছিল। চলন্ত বাসে আচমকাই আগুন লেগে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মৃতেরা হলেন গোঘাটের শ্যাওড়া এলাকার বিশ্বনাথ দাস, গোঘাটেরই হাজিপুরের বাসিন্দা দুর্গা চোমড়ে, তারকেশ্বরের বিশ্বনাথ মণ্ডল, বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার বাসুদেবপুরের মালতি নাইকেল এবং হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের রাজবলহাট অঞ্চলের নাইটা গ্রামের বাসিন্দা গোপাল বাউরি। মৃতদের বয়স ৫০ থেকে ৬৫-এর মধ্যে। আহতদের মধ্যে আছেন মৃত দুর্গাদেবীর স্বামী শক্তিপদ চোমরে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ অগস্ট আরামবাগের একটি ভ্রমণ সংস্থা থেকে বাস ভাড়া নিয়ে এবং বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার লেগো গ্রামের অন্য একটি ভ্রমণ সংস্থার ব্যবস্থাপনায় মোট ৭৮ জন যাত্রী দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছিলে। যাত্রীরা হাওড়া, হুগলি ও বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। বিজয়ওয়াড়া, কাঞ্চিপুরম-সহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে শনিবার রাতে কন্যাকুমারী রওনা দেয় ভ্রমণার্থীদের বাসটি।
ওই বাসেই ছিলেন গোঘাটের কামারপুকুরের বাসিন্দা অনিল নন্দী, খাটুলের দম্পতি কাজল ও লক্ষ্মী ধাড়া, বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার বৈতল গ্রামের শিক্ষক জগন্নাথ রায়, লেগো গ্রামের তরুণ মুখোপাধ্যায়। তাঁরা জানান, শনিবার সাড়ে ৯টা নাগাদ রামেশ্বরমে সকলে রাতের খাবার খান। তারপর সাড়ে ১১টায় রামেশ্বরম বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁদের বাস ছাড়ে। বছর সাতান্নর অনিলবাবু বলেন, “বাস ছাড়ার আধ ঘন্টার মধ্যেই সকলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভাঙে। দেখি বাসের পিছনে আগুন জ্বলছে আর গোটা বাস ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে।” এরপর যাত্রীরা সব হুড়মুড়িয়ে বাস থেকে নামতে শুরু করেন। অধিকাংশেরই ব্যাগপত্র বাসে থেকে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এবং দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ততক্ষণে অবশ্য পাঁচ জন বাসের মধ্যেই পুড়ে মারা গিয়েছেন। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে শিউরে উঠলেন ওই বাসের যাত্রী মধ্যবয়সী কাজলদেবী। তিনি বলেন, “আগুন নেভানোর পরে দেখি কয়েকঘন্টা আগেও যাঁদের সঙ্গে একসঙ্গে খেয়েছি, সেই পাঁচ জন সহযাত্রীর দেহ পুড়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।”
পুলিশ এসে জখমদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তির বন্দোবস্ত করে। বাকি যাত্রীদের প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় একটি স্কুল চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকাবাসীই তাঁদের পোশাক, খাবারদাবারের ব্যবস্থা করে দেন।
কিন্তু বাসে আগুন লাগল কী করে? যে সংস্থা এই ভ্রমণের ব্যবস্থাপনায় ছিল, তার প্রধান সাধন রায়ও বাসে ছিলেন। তিনি বলেন, “বাসের পিছনের আলো থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লেগেছে বলেই অনুমান।” বাসের মালিক অসিত চৌধুরীরও বক্তব্য, “শর্ট সার্কিট থেকে বাসে আগুন লাগতে পারে।” জানা গিয়েছে, ভ্রমণার্থীদের রান্নার জন্য বাসের ছাদে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। তাতেই দ্রুত আগুন ছড়ায়। বাসের চালক অরুণ সামুই জানিয়েছেন, আগুন লেগেছে বোঝার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাস থামান।