Advertisement
E-Paper

মাছ ও আনাজ আটকে ফরাক্কায়

মোর্তাজা আলির বাড়ি বর্ধমানের নারায়ণপুরে। বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে আলু বোঝাই লরি নিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন মালদহের চাঁচলে। পাঁচ দিন দাঁড়িয়ে থাকার পরে মালিকের কথায় চারটি ছোট গাড়ি ভাড়া করে আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২০
বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ। মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ট্রাক থামিয়ে চলছে রান্নাবান্না। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ। মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ট্রাক থামিয়ে চলছে রান্নাবান্না। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বানভাসি উত্তরবঙ্গে হু-হু করে চড়ছে আনাজের দাম। অথচ মুর্শিদাবাদ থেকে আলু-পটল-মাছ নিয়ে মালদহে ঢুকতে পারছে না লরি। রাস্তাতেই সব পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সুতি পর্যন্ত গিয়েছে লরির সার। কিন্তু মালদহ দুই দিনাজপুরের যা অবস্থা তাতে ফরাক্কা থানার পুলিশ সেগুলিকে ব্যারাজ পেরোতে দিতে পারছে না।

কানপুরের সানি কুমার নাসিক থেকে পেঁয়াজের লরি এনে ৪ দিন ধরে থমকে দাঁড়িয়ে সমশেরগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুরের কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘সঙ্গে যা টাকা রয়েছে তাতে বড় জোর দু’দিন চলবে। কথা ছিল, বিক্রির টাকা নিয়ে ফিরব। কিন্তু এখন যা অবস্থা, পেঁয়াজটাই কি আস্ত রাখতে পারব?” বালুরঘাটের অচিন্ত্য মাহাতোও নাসিক থেকে পেঁয়াজের লরি নিয়ে যাচ্ছিলেন মেহেদিপুর সীমান্তে। তাঁর আক্ষেপ, “ফরাক্কা বাঁধ পেরোলেই মেহেদিপুর। কিন্তু পুলিশ লরি যেতে দিচ্ছে না।”

মোর্তাজা আলির বাড়ি বর্ধমানের নারায়ণপুরে। বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে আলু বোঝাই লরি নিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন মালদহের চাঁচলে। পাঁচ দিন দাঁড়িয়ে থাকার পরে মালিকের কথায় চারটি ছোট গাড়ি ভাড়া করে আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। কেননা লরি আটকালেও পুলিশ ছোট গাড়ি যেতে দিচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশের রাম রাও অবশ্য ফাঁপরে। মাছ বোঝাই লরি নিয়ে তিনি রওনা দিয়েছিলেন ৭ দিন আগে। যাবেন অসমের তিনিসুকিয়া। চার দিন তাঁর লরি আটকে সাজুর মোড়ে। তিনি বলেন, “সাত দিন পর্যন্ত মাছ থাকবে। তাই তিনিসুকিয়া আর যাওয়া যাবে না। মালদহে নিয়ে গেলে হয়তো কম-বেশি করে বিক্রি করা যেত। কিন্তু ছোট গাড়ি হাজার টাকার জায়গায় তিন হাজার টাকা চাইছে। এত টাকা দিয়ে তার পর মাছ বিক্রি করতে না পারলে পুরোটাই লোকসান।”

চার লেনের জাতীয় সড়কে এখন দু’টি লেন খোলা। সেখান দিয়ে যাচ্ছে আসছে বাস ও ছোট গাড়ি। আর এক পাশে লরির লাইন। ফরাক্কা থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘কী করি বলুন, উত্তর দিনাজপুরে এক জায়গায় রাস্তা এমন ভাবে ভেঙেছে যে এত লরি ছেড়ে দিলে জট পাকিয়ে যাবে। তাই ছোট গাড়ি ছাড়া হচ্ছে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘কারও লরিতে যদি মাছ বা আনাজের মতো পচনশীল সামগ্রী থাকলে, আমাদের জানালে সেই লরি বের করার ব্যবস্থা করব, যাতে অন্তত মালদহ পর্যন্ত চলে যেতে পারে।’’

অমৃতসর থেকে আসা কর্ণ সিংহ পাঁচ দিন আগে এক সঙ্গে পাঁচটি লরি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। যাওয়ার কথা গুয়াহাটি। ৫টি লরিতে লোহার মালপত্র। ফলে তাঁর আশু উদ্ধারের সম্ভাবনাও নেই। ব্যাজার মুখে তিনি বলেন, ‘‘এত লরি দাঁড়িয়ে যে রাস্তার পাশের ধাবা খাবার জোগান দিতে পারছে না। বাজার থেকে আনাজ কিনে এনে দু’বেলা রান্না করছি। এ ভাবে কত দিন চলবে, কে জানে!”

Farakka Flood Truck Fishes Vegetables উত্তরবঙ্গ ফরাক্কা ব্যারাজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy