Advertisement
E-Paper

নাগাড়ে বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি দুই জেলায়

নাগাড়ে বৃষ্টিতে হুগলি ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। হুগলির আরামবাগ, খানাকুল, তারকেশ্বর, হরিপাল জাঙ্গিপাড়া, বলাগড় এবং পান্ডুয়া ব্লকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক দিকে ডিভিসি-র ছাড়া জল, অন্য দিকে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, কানা নদী, ডাকাতিয়া খাল উপচে হুগলির বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলে বহু মাটির ঘড়বাড়ি ভেঙে পড়ায় গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৩
জমি, পুকুর একাকার। খানাকুলের শাবলসিংহপুরে নিজস্ব চিত্র।

জমি, পুকুর একাকার। খানাকুলের শাবলসিংহপুরে নিজস্ব চিত্র।

নাগাড়ে বৃষ্টিতে হুগলি ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। হুগলির আরামবাগ, খানাকুল, তারকেশ্বর, হরিপাল জাঙ্গিপাড়া, বলাগড় এবং পান্ডুয়া ব্লকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এক দিকে ডিভিসি-র ছাড়া জল, অন্য দিকে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, কানা নদী, ডাকাতিয়া খাল উপচে হুগলির বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলে বহু মাটির ঘড়বাড়ি ভেঙে পড়ায় গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন মানুষ। হাওড়া, হুগলির বহু জায়গায় কৃষিজমি ডুবে গিয়েছে। আমন ধানের বীজতলা চলে গিয়েছে জলের নীচে।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের লোকজন কাজ করছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই পর্যায়ক্রমে জল ছাড়া হচ্ছে, যাতে গ্রাম রক্ষা করা যায়।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, হুগলিতে ১০১টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
দক্ষিণবঙ্গে টানা বৃষ্টি ও ঝাড়খন্ডে প্রচুর বৃষ্টিপাতে ডিভিসি মাইথন, তিলাইয়া, পাঞ্চেত— সব জলাধারেই জলের চাপ বাড়ছে। তার জেরে ডিভিসি জল ছাড়ায় হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান-সহ নিম্ন দামোদরের নদী লাগোয়া গ্রামগুলি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। প্রায় সব নদীই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। কোথাও কোথাও গ্রামের নিচু এলাকায় জমিদারী বাঁধ ভেঙে (হানা) জল ঢুকছে।
ডাকাতিয়া খাল উপচে হরিপাল ব্লকের দ্বারহাট্টা, আশুতোষ, সহদেব, নারায়ণপুর-বাহিরখণ্ড, চন্দনপুর, বন্দিপুর, কিঙ্করবাটি, কৈকালা-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বহু গ্রাম জলমগ্ন। বহু জায়গায় রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে। হরিপাল-জাঙ্গিপাড়া রুটের বাস চলাচল বিপর্যস্ত। ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে গ্রামবাসীরা। প্রশাসনের হিসেবেই অন্তত দু’হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। ব্লকে প্রশাসনের তরফে ৩০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। পাশাপাশি গবাদি পশুদের জন্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের তরফে শিবির করা হয়েছে। জাঙ্গিপাড়ার বাহানা, মুণ্ডলিকা-সহ ডাকাতিয়া খাল লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রামগুলিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হরিপালের স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রী বেচারাম মান্না, জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, মহকুমাশাসক (চন্দননগর) পীযূষ গোস্বামী এবং পঞ্চায়েত সমিতির লোকজন এ দিন সকাল পরিস্থিতি দেখতে যান। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিন বৈঠকে বসেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। বেচারামবাবু বলেন, ‘‘ডিভিসির ছাড়া জলে জেলায় প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। ত্রাণ শিবিরে দুর্গতদের রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও বন্যা দুর্গতদের অনেকেই ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে ডিভিসির ছাড়া জল এখনও বাঁধ না উপচালেও গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতেই জলমগ্ন আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের দু’টি ব্লক এবং পুরশুড়া ব্লকের প্রায় অনেকাংশ। তিনটি ব্লক মিলিয়ে কয়েক হাজার মাটির বাড়ি ভেঙেছে।

ধান এবং সবজি চাষের ক্ষতির পাশাপাশি নাগাড়ে বৃষ্টিতে অধিকাংশ পুকুর ভেসে মাছ চাষের ক্ষতি হয়েছে।

আরামবাগ পুরএলাকার ১৯টি ওয়ার্ডের ১২টিই জলমগ্ন। খানাকুল-২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত এলাকায় উঁচুতে থাকা বাড়িগুলি বাদে সর্বত্রই প্লাবিত। বাসিন্দারা ত্রিপল এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন। খানাকুলের বিডিও অনুপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ত্রিপল যা মজুত ছিল তা দেওয়া হয়েছে। চালও দেওয়া হচ্ছে। ত্রিপল সহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী আরও চাহিদার বিষয়টি মহকুমা শাসককে জানানো হয়েছে।’’

খানাকুল ১ ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েত জলমগ্ন। তাঁতিশাল এবং অরুন্ডা পঞ্চায়েতের বেশ কিছু বাড়ি জলের তলায়। পুড়শুড়া ব্লকে ৮টি পঞ্চায়েত এলাকার সবকটিই জলমগ্ন। কয়েকশো মাটির বাড়ি ভেঙেছে। মহকুমা শাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, ‘‘সর্বত্রই ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। পাঠানো হচ্ছে ত্রিপল। অন্যান্য সামগ্রীর কতটা প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা টিম পুরো বিষয়টা নজর রাখছে। সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে হাওড়া জেলার বাগনান, উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, জগৎবল্লভপুর, আমতা, শ্যামপুর প্রভৃতি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে জল ঢুকেছে। বাগনানের দেউলটির কাছে মুম্বই রো়ডে নির্মীয়মাণ আন্ডাসপাসের রাস্তায় ধস নামায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। জলমগ্ন হয়ে পড়ে জগৎবল্লভপুর থানা চত্বর। কুলগাছিয়ার শ্রীরামপুরে এ দিন বাসিন্দারা মুম্বই রোড অবরোধ করেন। তাঁদের অভিযোগ, এই রাস্তা সম্প্রসারণের সময়ে জল নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ নিকাশি খাল পরিষ্কার করে দেয়। উলুবেড়িয়াতেও বাজারপাড়ায় জল নিকাশির দাবিতে স্থানীয় ওটি রোড অবরোধ করা হয়।

এ দিকে বুধবার সকালেই খবর আসে ডিভিসি ৫২ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। যদিও সেচ দফতর জানিয়েছে, আতঙ্কের কিছু নেই। সেচ দফতরের পদস্থ বাস্তুকাররা আমতা ও উদয়নারায়ণপুরে দামোদরের বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। সেচ দফতরের এক কর্তা জানান, এমনিতেই মাঠে বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। তার উপর ডিভিসি জল ছাড়ছে। কোনওভাবে যাতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেটা সুনিশ্চিত করতেই তাঁরা নদীবাঁধের দিকে নজর রাখছেন। তেমন কিছু হলে আপৎকালীন ত্রাণের ব্যবস্থা তৈরি রাখা হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা জানান।

Hooghly Howrah Flood Arambag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy