Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
bengal flood

Flood Situation: টানা বৃষ্টিই শত্রু, খারাপ হচ্ছে আমতা, ঘাটাল ও খানাকুলের পরিস্থিতি

উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা দুই নম্বর ব্লকে প্লাবন পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। জল ঢুকেছে আমতার আরও তিনটি পঞ্চায়েতে।

এখন যাতায়াতে ভরসা নৌকা।

এখন যাতায়াতে ভরসা নৌকা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২১ ১৯:১২
Share: Save:

বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আশঙ্কাও বাড়ছে হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের প্লাবিত অংশে। ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের উপর দিয়ে বিস্তৃত রয়েছে মৌসুমী অক্ষরেখাও। এই জোড়া ফলায় বিদ্ধ হয়ে আশঙ্কায় কাঁপছে দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলার একটি বড় অংশের বাসিন্দা।

বুধবার গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা দুই নম্বর ব্লকের প্লাবন পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। বরং নতুন করে জল ঢুকেছে আমতা দুই নম্বর ব্লকের আরও তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে— ন’পাড়া, তাজপুর এবং নারিট। উদয়নারায়ণপুরের ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সাতটি সম্পূর্ণ ভাবে প্লাবিত। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

একই পরিস্থিতি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলমগ্ন। জল ঢুকেছে ঘাটাল শহরেও। প্রচুর কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বহু মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদেরও। স্পিড বোট নিয়ে প্লাবিত এলাকাগুলি ঘুরে দেখছেন তাঁরা। ঘাটালের মূল সড়ক থেকে জল নেমে যাওয়ায় যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেওয়ায় প্রশাসনের তরফে বিলি করা হচ্ছে জলের পাউচ। বুধবার সেখানে যান স্থানীয় সাংসদ দেব। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত কারও বিরুদ্ধে এ ভাবে কথা বলি না আমি। কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, দিদি যত দিন না প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, তত দিন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের কোনও সম্ভাবনাই নেই। তাই দিদিকে প্রধানমন্ত্রী করতেই হবে। তা না হলে, কেন্দ্রে যে সরকারই থাকুক, বিশেষ করে আজকের সরকার যদি থাকে, ঘাটালের মানুষের এই দুর্দশা ঘুচবে না।’’

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে, জলমগ্ন এলাকায় রয়েছেন প্রায় ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ। ১৮ হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ভেঙে পড়েছে। জেলা জুড়ে মোট ১০৬টি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্লাবনের জেরে নানা ভাবে জেলায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। প্লাবিত এলাকার মানুষদের জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে শুরু হয়েছে বিশেষ পরিষেবা, ‘দুয়ারে ডাক্তার’। নৌকায় করে ডাক্তার, নার্স এবং আশাকর্মীরা পৌঁছে যাচ্ছেন দুর্গত এলাকায়। অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশির পাশাপাশি পেটের গোলমালে ভুগছেন। সে জন্যই স্যালাইন-সহ ওষুধপত্র নিয়ে চিকিৎসক, নার্সরা নৌকা চড়ে পৌঁছে যাচ্ছেন প্লাবিত এলাকায়।

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হুগলিতে রূপনারায়ণ এবং দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙেছে। তার জেরে খানাকুলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খানাকুলে প্লাবন পরিস্থিতি পরিদর্শন করার কথা ছিল। তবে সেই কর্মসূচি বাতিল হয়। মুখ্যমন্ত্রী সড়কপথে হাওড়ার আমতা পরিদর্শনের পর কলকাতা ফেরেন। আপাতত খানাকুলের গ্রামগুলি থেকে জল নামতে শুরু করেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। আমতায় মমতা বলেন, ‘‘নিজেদেরই সাবধানে থাকতে হবে। প্রাণহানি যাতে না হয়, তা দেখতে হবে। মানুষকে সাহায্য করার জন্য বাকি যে সাহায্য দরকার, তা সরকার করবে।’’

হুগলির খানাকুলেও চলছে নৌকা।

হুগলির খানাকুলেও চলছে নৌকা। নিজস্ব চিত্র।

বুধবার সকাল থেকে বাঁকুড়ায় ফের শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। তার জেরে গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, কংসাবতী এবং শালী নদীর জল বাড়ছে। গন্ধেশ্বরীর উপরে থাকা মানকানালি সেতু এখন জলের তলায়। বাঁকুড়া জেলার অন্যতম সব্জি উৎপাদক অঞ্চল এই মানকানালি। সেখানকার সেতু ডুবে যাওয়ায় আপাতত শহরে সব্জির আকাল দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা।

জলমগ্ন মানকানালি সেতু।

জলমগ্ন মানকানালি সেতু। নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়া দু’নম্বর ব্লকের বিডিও শুভব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মানকানালি সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করেছে বলে খবর পেয়েছি । ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেতুর দু’দিকে পুলিশ মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE