Advertisement
E-Paper

নজরে বিধানসভা নির্বাচন, সাংগঠনিক নির্বাচন নিয়ে সে জন্য কি ‘ধীরে চলো’ নীতি নিচ্ছে রাজ্য বিজেপি

১০ ফেব্রুয়ারির (সোমবার) মধ্যে জেলা সভাপতি নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বনসল। কিন্তু নতুন জেলা সভাপতিদের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আসা দূরের কথা, মণ্ডল সভাপতিদের নামও ঘোষিত হল না।

Focus on Assembly polls, BJP stalls announcement of organisational poll results in Bengal, Bhagwat’s Bengal tour also a reason?

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:০০
Share
Save

নজর বিধানসভা নির্বাচনের দিকে। তাই সাংগঠনিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিচ্ছে বিজেপি। বুথ, মণ্ডল ও জেলা সভাপতি নির্বাচনের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। যা শেষ হল ১০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার)। কিন্তু জেলা সভাপতি দূর অস্ত, এখনও মণ্ডল সভাপতিদের নামই ঘোষণা করে উঠতে পারেনি বিজেপি। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বুথ, ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মণ্ডল এবং ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা সভাপতি নির্বাচন। বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল এমনই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা মানতে পারল না রাজ্য বিজেপি। বিজেপির একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, মণ্ডল সভাপতিদের নামের তালিকা তৈরি। শুধু ঘোষণা হওয়া বাকি।

অধিকাংশ মণ্ডলেই নির্বাচন হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। তা হলে ‘সময়সীমা’ মেনে মণ্ডল সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে না কেন? প্রশ্নের উত্তরে নানা তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠন এবং বিধায়কদের মধ্যে ‘বোঝাপড়া’ তৈরিই যে মূল লক্ষ্য, সে কথাই শোনা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

বিধায়ক-সাংসদদের মতামত

প্রকাশ্যে মন্তব্যে কেউ রাজি না হলেও বিজেপির অন্দরে কান পাতলে বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি আপাতত রাজ্যে তাদের সংগঠনকে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ‘সুবিধাজনক’ ভাবে সাজাতে চাইছে। জনপ্রতিনিধিদের (বিধায়ক-সাংসদ) সঙ্গে সাংগঠনিক পদাধিকারীদের মসৃণ বোঝাপড়ার কথা মাথায় রাখা হচ্ছে। তাই মণ্ডল সভাপতি বা জেলা সভাপতির নাম চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট বিধায়ক ও সাংসদদের মত নেওয়া হচ্ছে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ১৮টি আসন জেতে বিজেপি। সেই নির্বাচনের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যের ১২১টি বিধানসভায় বিজেপি এগিয়ে ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনের কিছু দিন পর থেকেই রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক দায়দায়িত্বে বদল শুরু হয়। বুথ, শক্তিকেন্দ্র, মণ্ডল, জেলা— বিভিন্ন স্তরের দায়িত্ব যাঁদের হাতে যায়, তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় সাংসদদের বোঝাপড়া মোটেই মসৃণ ছিল না। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭-এ আটকে যাওয়ার নেপথ্যে বোঝাপড়ার সেই অভাব অন্যতম বড় কারণ বলে প্রবীণ নেতাদের অনেকের অভিমত। কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগেও সে ভুল যে শুধরে নেওয়া যায়নি, তা ফলাফলেই স্পষ্ট। বোঝাপড়ার সমস্যা কত বড় নির্বাচনী বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে, তা সুভাষ সরকার থেকে লকেট চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত একাধিক সাংসদ (তৎকালীন) ২০২৪-এর ভোটে টের পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ বার তাই অনেক ‘সাবধানি’। ২০২৬-এর ভোটে বিধায়কদের যাতে একই সমস্যার মুখে পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছেন তাঁরা। সংগঠন পর্বে বিধায়ক-সাংসদদের মতকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা। রাজ্য নেতৃত্বের একাংশও এই পদ্ধতিকেই সমর্থন করছেন। রাজ্যের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘এক বছর পরেই বিধানসভা ভোট। তাই এ বার সাংগঠনিক নির্বাচনে বিধায়কদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। সংগঠনের দায়িত্বে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি তথা প্রার্থীদের বোঝাপড়া ভাল হওয়া জরুরি। তাই মণ্ডল সভাপতিদের নাম ঘোষণার আগে বিধায়কদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। সাংসদদের সঙ্গেও আলোচনা করা হচ্ছে। আলোচনার ভিত্তিতে যাতে সর্বসম্মত ভাবে সর্বাধিক নাম তুলে আনার চেষ্টা চলছে। তাই একটু দেরি হচ্ছে।’’

‘সময়সীমা’-র কী হবে?

বিজেপি সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও সময়সীমা ইচ্ছামতো ঘোষণা করেননি। সে সময়সীমা রাজ্য নেতৃত্ব একতরফা ভাবে ভেঙেও দেননি। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দলের নতুন সর্বভারতীয় সভাপতির নাম ঘোষিত হতে পারে। তার আগেই বিভিন্ন রাজ্যে নতুন সভাপতি বাছাইয়ের কাজ সেরে ফেলা আদর্শ রীতি। সেই কারণেই ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাকেও প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ‘সময়সীমা’ মেনে চলার চেয়ে দলের অন্দরে বোঝাপড়া বাড়ানো বেশি জরুরি বলে দিল্লি-কলকাতা উভয়েই সহমত। কয়েকটি রাজ্যের সভাপতি নির্বাচন আটকে থাকলে সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন পিছিয়ে যাবে না। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৫০ শতাংশের বেশি রাজ্যে সাংগঠনিক নির্বাচন হয়ে গেলেই সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন হতে পারে। দিল্লি সূত্র জানাচ্ছে, বিধানসভা ভোটের জন্য হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, দিল্লিতেও সাংগঠনিক প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হয়েছে। বাংলায় বিলম্ব আরজি কর আন্দোলনের কারণে। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন। তাই কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনে বাধা নেই। দিল্লির ওই সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছেন, বিধানসভা নির্বাচনমুখী বঙ্গ বিজেপি সময় নিয়েই কাজ করুক।

ভাগবতের সফরে বেশি সতর্ক

এমন একটা সময়ে বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার কথা, যখন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত দীর্ঘতম বঙ্গ সফরে রয়েছেন। রাজ্য বিজেপিতে এর আগে একাধিক বার মণ্ডল সভাপতি বা জেলা সভাপতি পছন্দ না হওয়ায় বিক্ষোভ-ভাঙচুর-আগুন দেখা গিয়েছে। জেলা থেকে বিজেপি কর্মীরা রাজ্য দফতরে গিয়েও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ বারও তেমন কিছু হবে না, সে বিষয়ে নেতৃত্ব নিশ্চিত নন। সরসঙ্ঘচালক বঙ্গ সফরে থাকাকালীন বিজেপির অন্দরমহলের ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসুক, নেতৃত্ব তা চাইছেন না। তাই সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চালু থাকলেও আপাতত কোনও নাম ঘোষণা হবে না বলেই বিজেপি সূত্রের দাবি।

BJP Bengal West Bengal Politics BJP President Sukanta Majumdar Suvendu Adhikari Mohan Bhagwat RSS

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}