Advertisement
E-Paper

সই কি জাল? ধরবে বাঙালির সফ্‌টওয়্যার

গুরুচরণের সম্পত্তির দাবিদার ছিলেন দু’জন। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী বরদাসুন্দরী ও ভাইপো নবদ্বীপ। দু’জনেই কোর্টে দাখিল করেছিলেন প্রয়াত গুরুচরণের উইল। ভাইপোর দেওয়া উইলে গুরুচরণের পাকা হাতের সই জ্বলজ্বল করছে। বরদাসুন্দরীর পেশ করা উইলে সই অস্পষ্ট, কাঁপা হাতের।

সোমনাথ চক্রবর্তী ও অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গুরুচরণের সম্পত্তির দাবিদার ছিলেন দু’জন। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী বরদাসুন্দরী ও ভাইপো নবদ্বীপ। দু’জনেই কোর্টে দাখিল করেছিলেন প্রয়াত গুরুচরণের উইল। ভাইপোর দেওয়া উইলে গুরুচরণের পাকা হাতের সই জ্বলজ্বল করছে। বরদাসুন্দরীর পেশ করা উইলে সই অস্পষ্ট, কাঁপা হাতের।

আপাত ভাবে নবদ্বীপের পাল্লা ভারী। কিন্তু বাদ সাধলেন তারই বাবা রামকানাই। বিচারককে রামকানাই জানালেন, গুরুচরণ সজ্ঞানে যে উইলে সই করে গিয়েছেন, সেটি তিনিই লিখে দিয়েছিলেন। আর সেই উইলই ছিল বরদাসুন্দরীর হেফাজতে। অর্থাৎ, নবদ্বীপের উইলের সইটি ভুয়ো।

রবি ঠাকুরের ‘রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা’ গল্পে ‘নায়কের’ এই সাক্ষ্যই মামলার মোড় বেবাক ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আইনজীবীরা বলছেন, ঘটনাটা এখনকার হলে কোনও হস্তাক্ষর বিশারদকে দিয়ে গুরুচরণের সই পরীক্ষা করানো হতো। মূলত তাঁর রিপোর্টের উপরে নির্ভর করত নবদ্বীপ-বরদাসুন্দরীর সম্পত্তি-ভাগ্য। কিন্তু বিশারদই যদি ভুল করে বসেন? কিংবা যদি অসৎ হন? তা হলে কি বরদাসুন্দরীর আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারত?

সংশয় যথেষ্ট। যে কারণে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গোয়েন্দা-তদন্তে যন্ত্রের মতামত ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ, যন্ত্র সচরাচর ভুল করে না। তার ফলাফলে প্রভাবও খাটানো যায় না। কিন্তু হস্তাক্ষর পরীক্ষায় তেমন যন্ত্র কোথায়!

এখনও নেই। তবে এমনই এক যন্ত্রের আগমনী সম্প্রতি শোনা গিয়েছে বিশ্বের দরবারে, যার নেপথ্যে দুই বাঙালি বিজ্ঞানী! ওঁদের বছর দুয়েকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল সম্প্রতি ঠাঁই পেয়েছে আন্তর্জাতিক ফরেন্সিক পত্রিকা ‘জার্নাল অফ ফরেন্সিক ডকুমেন্ট এগজামিনেশন’-এ।

সুশান্ত মুখোপাধ্যায় ও সুব্রতকুমার মণ্ডল নামে ওই দুই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য— শুধু চোখে দেখায় নির্ভর না-করে হস্তাক্ষর পরীক্ষার যান্ত্রিক উপায় বার করা। সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘প্রত্যেকের হাতের লেখার দু’টি বিশেষত্ব। একটি একান্ত ব্যক্তিগত। অন্যটি ছোটবেলায় শিক্ষক বা অন্য কারও কাছে রপ্ত করা। প্রত্যেকের লেখার নির্দিষ্ট ধাঁচ (প্যাটার্ন) রয়েছে।’’ ওঁরা জানাচ্ছেন, যে কারও লেখায় অক্ষরগুলোয় সামঞ্জস্য থাকে। কারও হস্তলিপির নমুনার সঙ্গে বিতর্কিত কোনও লেখাকে মিলিয়ে দেখে বলে দেওয়া সম্ভব, সেটি আসল না নকল।

এবং ‘মিলিয়ে দেখা’র কাজটা যাতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্ভুল ভাবে করা যায়, সেই লক্ষ্যে সুশান্তবাবুরা বানিয়ে ফেলেছেন একটি সফ্‌টওয়্যার— ম্যাচিং ইন্ডেক্স। যার সাহায্যে কম্পিউটারই আসল-নকল ধরিয়ে দেবে বলে ওঁদের দাবি। জার্নালে বলা হয়েছে, ২০১১ থেকে দু’বছর বিভিন্ন ‘কেস স্টাডি’ করে সুশান্তবাবু-সুব্রতবাবু ২০১৩-য় সফ্‌টওয়্যারটি তৈরি করেন। পরের দেড় বছরে ওঁদের সামনে নানা প্রশ্ন তুলে বিষয়টির মৌলিকত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করেছেন জার্নাল কর্তৃপক্ষ। তার পরে গত মাসে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

এতে আশার আলো দেখছে সংশ্লিষ্ট নানা মহল। আত্মহত্যা হোক বা প্রতারণা কিংবা চেকের সই নকল করে অ্যাকাউন্টের টাকা লোপাট— বহু তদন্তে হস্তলিপির ভূমিকা অপরিসীম। ‘‘ফরেন্সিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটা নিঃসন্দেহে মৌলিক ও অতি প্রয়োজনীয় কাজ। ব্যাঙ্ক, কোর্ট আর পুলিশকে নানা ধাঁধার উত্তর পেতে সাহায্য করবে।’’— বলছেন রাজ্য ফরেন্সিকের এক প্রাক্তন কর্তা। সিবিআইয়ের ফরেন্সিক বিজ্ঞানী তথা ডকুমেন্ট বিভাগের প্রধান এন রবির কথায়, ‘‘এমন প্রয়াস আগেও হয়েছে। সফল হলে নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী ঘটনা।’’ কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গবেষণাটি পড়ে দেখিনি। তবে এ রকম সফ্‌টওয়্যার মিললে মামলায় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’’

দুই বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, সেরিব্রাল রোগী কিংবা কোনও ব্যক্তি ভয়ে, টেনশনে বা চাপের মুখে সই করলে হাতের লেখায় সামান্য হেরফের হতে পারে। তবে বিভিন্ন অক্ষরের মাপের অনুপাত মোটামুটি একই থাকে। এমন ক্ষেত্রে হাতের লেখা থেকে ধরা যায়, তখন ওঁর মনের অবস্থা কী ছিল। পরে এ নিয়ে বিশদ গবেষণার ইচ্ছা আছে সুশান্তবাবুদের।

Signature Software
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy