আদালত চত্বরে নিরঞ্জন মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
একটা সময় মাওবাদী কার্যকলাপে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে ক’দিন আগে আত্মসমর্পণ করেছেন লালগড় থানার হদহদি গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন মাওবাদী নিরঞ্জন মাহাতো ওরফে হৃষিকেশ। এরপর ১২ বছর পুরনো মামলায় ১২ দিনের মাথায় জামিনও পেয়েছেন তিনি। সেই নিরঞ্জন কোনও রাখঢাক না রেখেই কবুল করলেন, মাওবাদী প্যাকেজে একটা চাকরির জন্যই আত্মসমর্পণ করেছেন।
গত ১৮ জুলাই ঝাড়গ্রাম আদালত নিরঞ্জনের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করেছে। তারপর এক দিন ফের আদালতে এসেছিলেন তিনি। নিরঞ্জন মানছেন, ‘‘হোমগার্ডে চাকরির জন্য লালগড় থানায় ও জেলা পুলিশের কাছেও গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই মামলায় জামিন পেতে হবে জানিয়েছিল। তাই আত্মসমর্পণ করেছি।’’
নিরঞ্জন বর্তমানে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১০ সালের ২২ মে লালগড় থানার তৎকালীন আইসি অশোক বসু একটি সুয়োমোটো মামলা করেছিলেন। অভিযোগে আইসি জানিয়েছিলেন, ২১ মে সন্ধ্যায় খবর আসে লালগড় থানার দক্ষিণে হদহদি গ্রামে মাওবাদীরা বৈঠক করছে। ধরমপুরে সিআরপি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটের পরিকল্পনাও করেছে। এরপর জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। রাত আড়াইটে নাগাদ পুলিশ জানতে পারে, ১৫-১৬ জন সশস্ত্র মাওবাদী মহুলবনি ও বনিশোল জঙ্গলে বৈঠক করছে। অভিযান চালিয়ে জয়দীপ মাহাতো, বীরচাঁদ সরেন, সতীশ মাহাতোকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। বাকির পালায়। ঘটনাস্থল থেকে মাওবাদী পোস্টার, বোমা, দেশি একনলা বন্দুক, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের উস্কানিমূলক লিফলেট বাজেয়াপ্ত হয়।
ওই মামলার অভিযোগপত্রেই নিরঞ্জনের নাম ছিল। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, সে জন্য অস্ত্র জড়ো করা-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করেছিল। মাওবাদী নেতা সুকান্ত, শশধর, বিকাশ, আকাশের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করেছিল। সেই মামলাতেই গত ১৮ জুলাই আদালত নিরঞ্জনের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করে। নিরঞ্জনের আইনজীবী সায়ক ভদ্র বলেন, ‘‘এই মামলার এফআইআরে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। তা ছাড়া ১২ বছরেও চার্জশিট জমা পড়েনি। যাঁরা গ্রেফতার হয়েছিলেন তাঁরাও জামিনে রয়েছেন। তাই আদালত জামিন মঞ্জুর করেছে।’’ এ প্রসঙ্গে পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘চার্জশিট জমা পড়েনি। ফলে নিরঞ্জন ওই মামলায় যুক্ত ছিলেন কিনা তা এখনও তদন্ত সাপেক্ষ। আর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো দেশদ্রোহিতার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এখন অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ রয়েছে। নতুন করে এই ধারায় মামলা রুজু হচ্ছে না। ফলে এই মুহূর্তে চার্জশিট জমার সম্ভাবনা নেই।’’
এই পরিস্থিতিতে চাকরির জন্যই আত্মসমর্পণ করেছেন নিরঞ্জন। নিরঞ্জনের জামাইবাবু বুদ্ধেশ্বর মাহাতো বলেন, ‘‘যাঁদের বিরুদ্ধে এ রকম মামলা ছিল, তাঁরা অনেকেই স্পেশাল হোমগার্ডে চাকরি পেয়েছেন। নিরঞ্জন চাকরিটা পেলে পরিবারে সচ্ছলতা আসবে।’’ নিরঞ্জনও বলছেন, ‘‘জামিনের সার্চিং কাগজ নিয়ে আবার পুলিশের কাছে যাব চাকরির জন্য।’’ ঝাড়গ্রামের জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহার অবশ্য জানালেন, ‘‘এই চাকরির কোনও সিদ্ধান্ত জেলা থেকে হয় না। এ জন্য রাজ্য স্তরে কমিটি রয়েছে। ওঁর আবেদন ঠিক থাকলে রাজ্যে পাঠানো হবে। কমিটি তদন্ত করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy