E-Paper

পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে উধাও ভিক্টোরিয়া! পুত্রবধূ কি রুশ গুপ্তচর, কোর্টে প্রাক্তন ফৌজি

সৈকতের বাবা সমীর বসু নৌসেনার অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। একাত্তরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সমীরের বাবা, বড় ভাই— দু’জনেই ভারতীয় সেনার হয়ে সীমান্তে লড়াই করার সময় প্রাণ হারান।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:৪৫

—প্রতীকী চিত্র।

চিনে চাকরি করতে গিয়ে চন্দনগরের সৈকত বসুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল রাশিয়ার মেয়ে ভিক্টোরিয়া জ়িগালিনার। আলাপ থেকে প্রেম, তার পরে বিয়ে। বিয়ের পরে ভিক্টোরিয়ার জোরাজুরিতেই ২০১৯-এ চিন থেকে সস্ত্রীক ভারতে ফিরে এসেছিলেন সৈকত। একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ছোট-মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের বিশ্বব্যাঙ্কের প্রকল্পে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। সেই সময়ই সৈকত ও তাঁর পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন, ভিক্টোরিয়ার বাবা রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা ফেডেরাল সিকিউরিটি সার্ভিসেরঅবসরপ্রাপ্ত কর্মী।

সৈকতের বাবা সমীর বসু নৌসেনার অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। একাত্তরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সমীরের বাবা, বড় ভাই— দু’জনেই ভারতীয় সেনার হয়ে সীমান্তে লড়াই করার সময় প্রাণ হারান। সমীরবাবুর বক্তব্য, ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পরে সৈকত তাঁকে জানিয়েছিলেন যে তিনি অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি অফিসারের ছেলে। বিয়ের পরে কলকাতায় এসে ভিক্টোরিয়া চাপ দিতে থাকেন, তাঁকে কলকাতায় সেনার ইস্টার্ন হাইকমান্ডের সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ভিক্টোরিয়ার বাবা গুপ্তচর সংস্থায় কাজ করতেন জেনে সমীর তাতেরাজি হননি।

সৈকত ও তাঁর বাবা-মা আজ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগ জানালেন, ভিক্টোরিয়া তাঁদের পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে। সম্ভবত তাঁরা রাশিয়ায় চলে গিয়েছেন। সৈকতদের আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক আজ বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চে এই মামলার দ্রুত শুনানির জন্য আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সৈকতের ছেলেকে উদ্ধার করার জন্য দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হোক। বিদেশ মন্ত্রকের কূটনৈতিক যোগাযোগ কাজে লাগানো হোক। সমীরবাবুর সন্দেহ, ভিক্টোরিয়া শুধু রাশিয়ার প্রাক্তন গুপ্তচরের মেয়ে নন। তিনি নিজেও সম্ভবত রাশিয়ার গুপ্তচর। যাকে রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা এফএসবি বা ফেডেরাল সিকিয়রিটি সার্ভিসের ভারতের সামরিক তথ্য জানার জন্য নিয়োগ করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি-রই বর্তমান অবতার হল এই এফএসবি।

সমীর আজ সুপ্রিম কোর্টের সামনে বলেন, ‘‘কোভিডের সময় বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ভিক্টোরিয়া মস্কোয় গিয়ে সন্তানের জন্ম দিতে চেয়েছিল। যাতে সৈকতের ছেলে ভারতের বদলে রাশিয়ার নাগরিক হয়। ভিক্টোরিয়ার মা এ জন্য আমার ছেলেকে বিরাট অঙ্কের টাকা দিতে চেয়েছিলেন। নাতি হওয়ার পরে শিশুকে কাজে লাগিয়ে ভিক্টোরিয়া আমাদের উপরে চাপ দিকে থাকেন, আমরা যেন তাঁকে কলকাতায় ইস্টার্ন হাইকমান্ডের দফতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিই। তার জন্য সন্তানের উপরে অত্যাচারও শুরু করেন।’’

এ বিষয়ে প্রথমে কলকাতা হাই কোর্ট, তার পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা আসে। ভিক্টোরিয়া ছেলেকে নিজের কাছে রাখার দাবি জানিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট শেষ নির্দেশে জানায়, বাবা, মায়ের মধ্যে ছেলে একজনের কাছে সপ্তাহের চার দিন, অন্য জনের কাছে তিন দিন করে থাকবে। সৈকতের পরিবার সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানিয়ে বলেছে, গত ৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ছেলেকে সৈকতের কাছে ফেরত না দিয়ে উধাও হয়ে যান ভিক্টোরিয়া। তার আগেই নিজের জিনিসপত্র রশিয়ার দূতাবাসে সরিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। ভিক্টোরিয়ার আইনজীবী সৈকতদের জানিয়েছেন, তিনিও ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Russian Spy Supreme Court of India Daughter in law

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy