Advertisement
E-Paper

গ্রামে রোগী ও ডাক্তারের সেতু গড়তে প্রশিক্ষণ

গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের অভাব সামাল দিতে এ বার ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী তথা লিয়াজঁ অফিসার তৈরির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রন্টলাইন হেল্‌থ ওয়ার্কার্স’।

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:১২

মধুর অভাবে গুড় দিয়ে কাজ চালানোর বিধান আছে লোকসমাজে।

গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের অভাব সামাল দিতে এ বার ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী তথা লিয়াজঁ অফিসার তৈরির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রন্টলাইন হেল্‌থ ওয়ার্কার্স’।

রণক্ষেত্রে ফ্রন্টলাইন বা অগ্রবর্তী সারিতে থাকেন পদাতিকেরা। রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ে নতুন ফ্রন্টলাইন হেল্‌থ ওয়ার্কারেরাই নেবেন পদাতিকের ভূমিকা। তাঁরা কম্পাউন্ডারের দায়িত্ব পালন করবেন আবার ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে যোগাযোগকারীর ভূমিকাও নেবেন। টেলিফোন ও ভিডিও-কল মারফত সরাসরি ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর কথা বলিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন এবং তৎক্ষণাৎ অনলাইনে চলে আসা প্রেসক্রিপশনের প্রিন্ট-আউট দেবেন রোগীর হাতে। কোন ওষুধ কখন কী ভাবে খেতে হবে, রোগীকে বুঝিয়ে দেবেন তাঁরাই। তবে তাঁরা নিজেরা কখনওই কোনও ওষুধ লিখবেন না, দেবেন না স্যালাইন বা ইঞ্জেকশনও।

রাজ্যে এই নতুন স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন নিগম। আপাতত প্রথম ব্যাচে ৮৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শুধু বিজ্ঞান শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা তফসিলি জাতি-উপজাতি সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীরাই এই প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। ছ’মাসের প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষায় পাশ করলেই কেন্দ্রের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের শংসাপত্র দেওয়া হবে তাঁদের। তার পরে তাঁদের নিয়োগ করা হবে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে। এর জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। রাজ্যে ৩৫০০ গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। কিয়স্ক গড়া হবে তার সব ক’টিতেই। প্রতিটি কিয়স্কে ১০ জন প্রশিক্ষিত ফ্রন্টলাইন হেল্‌থ ওয়ার্কার নিয়োগ করা হবে।

অধিকাংশ চিকিৎসকই গ্রামে যেতে চান না। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারা তাই চিকিৎসা পরিষেবা পেতে নাজেহাল হন। নিরুপায় হয়ে তাঁদের অনেক ক্ষেত্রে গ্রামীণ চিকিৎসকদের (এক সময়ে যাঁদের হাতুড়ে চিকিৎসক বলা হত) শরণাপন্ন হতে হয়। ভুল চিকিৎসায় জীবন বিপন্ন হয় অনেকের। কিন্তু বিজ্ঞাপন দিয়েও সরকার গ্রামে ডাক্তার পাচ্ছে না। এই সমস্যা শুধু বাংলার নয়, গোটা ভারতেরই। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই সমস্যা মেটাতে গ্রামীণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে, যাতে তাঁরা অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন এবং রোগীকে ঠিক জায়গায় রেফার করতে পারেন। এ বার ভারত সরকার বিজ্ঞান শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করে ডাক্তারের অভাব মেটাতে চাইছে।

কী ভাবে কাজ করবেন ওই সব প্রশিক্ষিক স্বাস্থ্যকর্মী?

রাজ্যের তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উপেন বিশ্বাস জানান, ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি করে ট্যাব দেওয়া হবে। তার মধ্যে অনেক চিকিৎসকের নাম ও মোবাইল নম্বর থাকবে। কিয়স্কে কোনও রোগী এলে তাঁর কী কী সমস্যা হচ্ছে, তা জেনে নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী যে-কোনও এক জন চিকিৎসককে ফোন করে রোগীর কথা জানাবেন। প্রয়োজনে রোগীর সঙ্গে সরাসরি তাঁকে কথা বলিয়ে দেবেন বা ভিডিও ডাক্তারের মুখোমুখি করিয়ে দেবেন রোগীকে। চিকিৎসক অনলাইনে প্রেসক্রিপশন লিখে সাইবার সিগনেচার করে মেল করে দেবেন। তার প্রিন্ট-আউট রোগীকে দেবেন স্বাস্থ্যকর্মী। এর জন্য রোগীকে সামান্য ফি দিতে হবে।

ফ্রন্টলাইন হেল্‌থ ওয়ার্কারেরা ব্যান্ডেজ বাঁধতে পারবেন, চোখ ও রক্তচাপ পরীক্ষা করতে পারবেন। দরকার পড়লে পরীক্ষার জন্য রক্তও নিতে পারবেন এবং ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকের সঙ্গে রোগীকে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। ‘‘কিয়স্কে বিভিন্ন ওষুধ, ব্যান্ডেজ, স্যানিটারি ন্যাপকিন থাকবে। সেগুলির দামে প্রচুর ছাড় মিলবে। রোগী সেখান থেকেই সব কিনতে পারবেন। তাঁকে শহরে যেতে হবে না। বড় ডাক্তার দেখানোর জন্য হন্যে হয়ে ছোটাছুটিও করতে হবে না। আবার ডাক্তারবাবুকেও গ্রামে যেতে হবে না,’’ বললেন উপেনবাবু।

Front line health workers Doctors Patients ফ্রন্টলাইন হেল্‌থ ওয়ার্কার্স
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy