প্রতীকী ছবি
স্কুলে যাওয়ার পথে ২০১৬ সালে নদিয়ার একটি মেয়ের উপরে যৌন নির্যাতন চালায় এক যুবক। ছাত্রীর অভিযোগ পেয়ে যুবকটিকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। পরে জামিন পায় সে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মেয়েটিকে শাসানো হতে থাকে। বছর দুয়েক পরে ওই যুবক ও তার কয়েক জন সঙ্গী ফের ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। সিগারেটের ছেঁকা দেওয়া হয় তাকে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। যৌন নির্যাতন ও গণধর্ষণের বিচার শুরু হয় জেলা আদালতে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মেয়েটিকে হুমকি চলতেই থাকে। শুক্রবার মেয়েটি জানায়, ‘‘মা বছর দশেক আগে মারা গিয়েছেন। বাবা ব্রেন-স্ট্রোকে শয্যাশায়ী। বিচার এখনও শেষ হল না। এখন মনে হয়, আমিই অপরাধী।’’
২০১৭ সালের ঘটনা। স্কুলে যাওয়ার পথে সুন্দরবনের এক ছাত্রীকে বন্দুক দেখিয়ে নিয়মিত ধর্ষণ করা হত বলে অভিযোগ। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ওই নাবালিকা। তার একটি পুত্রসন্তান হয়। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত এখন জেলে রয়েছে। কিন্তু ধৃতের ঘনিষ্ঠেরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। ওই নির্যাতিতার কথায়, ‘‘কত দিন এর মোকাবিলা করতে পারব, জানি না। পুলিশ তো আর সব সময় পাশে থাকছে না। অভিযুক্তের টাকা আছে। সে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারবে। আমার সেই ক্ষমতা নেই।’’
২০১৪ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকার এক মহিলাকে বিয়ের টোপ দিয়ে পাচার করা হয়েছিল। ভিন্ রাজ্যে নিয়ে গিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয় তাঁকে। ওই যৌনপল্লিতে তাঁকে নিয়মিত ধর্ষণ করা হত। পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসার পরেও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য পাচারকারীরা এখনও নানা ভাবে তাঁকে শাসিয়ে চলেছে। পাচারকারীদের ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন ওই নির্যাতিতা। আপাতত উত্তর ২৪ পরগনার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
হায়দরাবাদে পুলিশের গুলিতে ধর্ষকদের মৃত্যুর খবর শুনে ওই নির্যাতিতার মন্তব্য, ‘‘এনকাউন্টারে মরুক বা না-মরুক, মামলা চলাকালীন এই ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তেরা যেন কোনও ভাবেই জেল থেকে ছাড়া না-পায়। দোষী প্রমাণিত হলে আদালত যেন ফাঁসির আদেশ দেয়। কারণ মৃত্যুই ওদের একমাত্র শাস্তি।’’
আলিপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন নিম্ন আদালতে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের হাজার হাজার মামলার নিষ্পত্তি হতে অনেক বছর লেগে যায়। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট পেরোতে কেটে যায় বছরের পর বছর। নির্যাতিতারা অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণ পান না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ কোথা থেকে মিলবে, তাঁরা তা জানেনও না।
আলিপুর আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিচারের দীর্ঘসূত্রতার জন্য নির্যাতিতারা হয়তো হতাশায় এমন কথা বলছেন। তবে বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমেই অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা হওয়া উচিত।’’ একই মত পোষণ করেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বিচার পর্ব দ্রুত শেষ হলে সমস্যার সমাধান হয়। তা হলেই নির্যাতিতারা হতাশ হবেন না।’’ তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পকসো এবং ধর্ষণের মিথ্যা মামলাও হয়ে থাকে বলে জানান রাধাকান্তবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy