Advertisement
E-Paper

নিজের বিয়ের কার্ড হাতে থানায় নাবালিকা

মাস তিনেক ধরেই তাকে চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল। বাবা-মা ছাড়া একা স্কুলে আসতে দেওয়া হতো না। কড়া নজর রাখছিলেন পরিজনেরাও। শেষ পর্যন্ত বাবার আস্থা অর্জন করে সেই নাবালিকা। স্কুলে যাওয়ার নামে বেরিয়ে সে সটান হাজির থানায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:২৯
আলোকলতা মাজি। নিজস্ব চিত্র।

আলোকলতা মাজি। নিজস্ব চিত্র।

মাস তিনেক ধরেই তাকে চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল। বাবা-মা ছাড়া একা স্কুলে আসতে দেওয়া হতো না। কড়া নজর রাখছিলেন পরিজনেরাও। শেষ পর্যন্ত বাবার আস্থা অর্জন করে সেই নাবালিকা। স্কুলে যাওয়ার নামে বেরিয়ে সে সটান হাজির থানায়। হাতে তার নিজেরই বিয়ের কার্ড!

সোমবার দুপুরে এ ভাবেই নিজের বিয়ে রুখেছে বোলপুরের সিঙ্গি পঞ্চায়েতের বড়ডিহা গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী আলোকলতা মাজি। থানায় বিয়ের কার্ড হাতে এমন দুঃসাহসী মেয়েকে দেখে প্রথমে হতচকিতই হয়ে যান থানার পুলিশকর্মীরা। শেষমেশ খবর যায় চাইল্ড লাইনে। বিয়ের আতঙ্কে আর বাড়িতেই ফিরতে চায়নি আলোকলতা। বরং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই তার ইচ্ছা। তাই আপাতত বীরভূম চাইল্ড লাইন এবং চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির তত্ত্বাবধানে তার ঠাঁই হয়েছে হোমের নিরাপদ আশ্রয়ে। দিনের শেষে আলোকলতার কথা শুনে অনেকেরই মনে পড়েছে নাবালিকা বিয়ে রোখার আইকন রেখা কালিন্দী-বীণা কালিন্দী-আফসানা খাতুনের কথা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বড়ডিহার বাসিন্দা পেশায় কৃষক খোকন মাজির মেয়ে অলোকলতা স্থানীয় সিঙ্গি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এক সপ্তাহ পরেই ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হতো তাকে। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া দাদার সঙ্গেই সমানে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিল আলোকলতা। সে কথা বাড়িতেও জানিয়েছিল। এই বয়সে বিয়ে না দেওয়ার অনুযোগও করেছিল। কিন্তু পরিবার সে কথা কানে তোলেনি। মেয়ে বিয়ে রুখে দিতে পারে, এই আশঙ্কায় আলোকলতাকে গত তিন মাস ধরে নজরবন্দি করে রেখেছিল পরিবার। এ দিন সিউড়িতে চাইল্ড লাইনের আধিকারিকদের সামনে ওই ছাত্রী বলে, ‘‘বিয়ের কার্ডটা জোগাড় করে রেখে পালানোর সুযোগ খুঁজছিলাম। সেই সুযোগ পেয়ে সাইকেল চালিয়ে প্রথমে বাসস্টপে আসি। সেখান থেকে বোলপুর যাওয়ার বাসে চাপি। বাস থেকে নেমে লোকেদের জিজ্ঞাসা করে থানায় যাই।’’

এ দিকে, ওই ছাত্রীকে থানায় দেখে অবাক হয়ে যান পুলিশ অফিসারেরা। খবর যায় বোলপুরের এসডিপিও এবং চাইল্ড লাইনে। বিকেলেই থানায় গিয়ে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে চাইল্ড লাইন। চাইল্ড লাইনের জেলা কাউন্সিলার মাধবরঞ্জন সেনগুপ্তের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওই ছাত্রীকে একটি হোমে রাখার ব্যবস্থা করেন। নাবালিকা হওয়ায় নিয়ম মেনে তাকে সিউড়িতে চাইল্ড ওয়েলফেরায় কমিটির কাছেও নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কমিটির নির্দেশে বর্তমানে হোমের নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে আলোকলতা।

ছাত্রীর বাবা খোকন মাজির বক্তব্য, সুপাত্র পেয়ে মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করেছিলেন। ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যায় না, এমন কোনও আইনের কথা জানতেন না বলেই তিনি দাবি করেছেন। তাদের ওই ছাত্রীকে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, জানতেন না বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন রায় বলেন, “এমন ঘটনার কথা আমরা জানতে পারলে অবশ্যই ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলতাম।’’ যদিও মেয়েটি বিয়ের কারণে স্কুলে অনিয়মিত হয়ে পড়লেও স্কুল তার কোনও খোঁজ রাখেনি। এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে গাছাড়া মনোভাবকে খেয়াল করেছে পুলিশ-প্রশাসন। তবে পুলিশ-প্রশাসনের সকলেই আলোকলতার সাহসিকতার প্রশংসা করছেন। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান নিত্যানন্দ রায় মঙ্গলবার বলেন, “এ মেয়ে নামেও আলো, কাজেও আলো। সে সাহসী হওয়ায় তার প্রতি এত বড় অবিচার এবং অন্যায় রুখতে পেরেছে। কিন্তু এখনও আতঙ্কে রয়েছে। তাই সে বাবা-মায়ের কাছে ফুরতে চায়নি।” আপাতত ওই এলাকায় একটি সচেতনতা শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।

childmarriage police MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy