প্রতীকী ছবি।
‘নেই, তাই খাচ্ছ’, লোকপ্রচলিত এই ধাঁধাটি খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে সোনারপুরের একটি স্কুলের ক্ষেত্রে। না আছে স্কুলবাড়ি, না আছে স্কুল চালানোর মতো গাছতলা। সেই সব ‘নেই’ সত্ত্বেও রয়েছেন তিন-তিন জন শিক্ষক এবং তাঁরা ‘খাচ্ছেন’ সেই স্কুলের শিক্ষক হিসেবে পাওয়া বেতনের টাকায়। এটা সম্ভব হচ্ছে, কারণ, নিছক কাগজে-কলমে হলেও ২০১১ সাল থেকে স্কুলটি রয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তালিকায়। তিন শিক্ষক বাস্তবে অস্তিত্বহীন সেই স্কুলের নামেই বেতন পেয়ে চলেছেন নিয়মিত। নির্ধারিত কাজ অর্থাৎ শিক্ষকতা তাঁরা করছেন ঠিকই। তবে ওই স্কুলে নয়, পার্শ্ববর্তী অন্যান্য স্কুলে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর মহকুমার সোনারপুর থানা এলাকায় এমনই অস্তিত্বহীন রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুল নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এখন সেই স্কুলের তিন শিক্ষক ওই জেলারই আশপাশের স্কুলগুলিতে শিক্ষকতা করছেন বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর। প্রশ্ন উঠছে, যে-স্কুলের কোনও অস্তিত্ব নেই, তার শিক্ষক হিসেবে কেন বেতন হবে তাঁদের? কেন তাঁদের কাগজে-কলমে অন্য স্কুলে বদলি করা হবে না?
শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, শুধু চম্পাহাটির রায়পুর গ্রামের রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুল নয়, সারা রাজ্যেই এই ধরনের বেশ কিছু জুনিয়র হাইস্কুল বা উচ্চ প্রাথমিক স্কুল রয়েছে, শিক্ষা দফতরের অনুমোদনের ভিত্তিতে কাগজে-কলমে যাদের পথ চলা শুরু হয় ২০১১ সালে। অনুমোদন পেয়ে সেই সময় কিছু স্কুল নিজেদের ভবন তৈরি করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস শুরু করে দিয়েছিল। কিছু স্কুলের কোনও বাড়িই তৈরি হয়নি। ফলে ক্লাসও শুরু করা যায়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুল অনুমোদন পায় ২০১১ সালে। কিন্তু ওই গ্রামের অন্য একটি প্রাথমিক স্কুল জুনিয়র হাইস্কুল বা উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে উন্নীত হওয়ায় রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলের ভবন আর তৈরি হয়নি।
রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ানোর জন্য যে-তিন জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল, পঙ্কজকুমার দাস তাঁদের এক জন। পঙ্কজবাবু এখন ওই জেলার কাঠিপোতা জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ান। তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে আমি রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলে নিযুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু স্কুলভবন না-থাকায় আমি অন্য একটা স্কুলে পড়াই। কিন্তু আমার বেতন হয় রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলের অধীনে। কাগজে-কলমে ওই স্কুল থেকে বদলি করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাই।’’
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘কিছু স্কুল বাস্তবে শুরু হল না। আর যে-সব জুনিয়র হাইস্কুল ২০১১ সালে অনুমোদন পেয়ে নতুন করে চালু হয়েছে বা প্রাথমিক স্কুল জুনিয়র হাইস্কুলে উন্নীত হয়েছে, সেগুলিরও পরিকাঠামো খুবই খারাপ। ছাত্র-সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy