বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা সেই সব কর্মস্থলে আর ফিরতে চাইছেন না বলে জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আর সরকারি আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, কর্মহীন এমন কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকই প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কারণ, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এত শ্রমিকের উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা করতে না-পারলে পরিযায়ীদের নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সুর আরও চড়বে। তাই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে পরিযায়ীদের তথ্য সংগ্রহের কাজে নজর রাখছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরও। গোটা প্রক্রিয়ার নেপথ্যে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আধিকারিকদের অনেকেই।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী সাড়ে ১২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বাংলায় ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে কমবেশি ৮০ শতাংশই ভিন্ রাজ্যে নিজেদের পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে চাইছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অধীনে এবং এক প্রবীণ আমলার নেতৃত্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্যনির্ভর প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়েছে। এখন তা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনও দক্ষতার নিরিখে পরিযায়ীদের তথ্য-ভান্ডার তৈরির কাজ করছে। আধিকারিকদের একাংশের ধারণা, নিখুঁত তালিকা তৈরিতে পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে প্রশান্ত কিশোরেরও।
প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রের একশো দিনের কাজ বা জলজীবন মিশনের মতো বড় বড় প্রকল্পে একসঙ্গে অনেককে কাজে লাগানো সম্ভব। কিন্তু সেই সব প্রকল্পে ইতিমধ্যেই জব কার্ডধারী অনেক
মানুষ কর্মরত। ফলে বেশি করে পরিযায়ীদের কাজে লাগাতে হলে প্রকল্পগুলির পরিধিও বাড়াতে হবে। ‘জল ধরো জল ভরো’র মতো প্রকল্পের আওতায় পুকুর ও কুয়ো কাটা, সড়ক ও সেতু পরিকাঠামো নির্মাণ, বিভিন্ন সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের সুযোগও থাকে। কিন্তু তার পরেও দক্ষতা অনুযায়ী সব পরিযায়ীর কাজের ব্যবস্থা করা বেশ কঠিন।
কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান প্রকল্পে ঠাঁই পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। ওই প্রকল্পে বঙ্গের একটি জেলারও ঠাঁই হল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল সরব হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাখ্যা, যে-সব জেলায় অন্তত ২৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন, এই প্রকল্পের জন্য শুধু সেগুলিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের আরও বক্তব্য, ১৫ জুন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ীদের হিসেব কষছিল। কারণ, তত দিনেও
সকলে নিজের নিজের এলাকায় থিতু হননি। তাই পরিযায়ীদের তালিকা চূড়ান্ত হলে এবং জেলায় তাঁদের সংখ্যা অন্তত ২৫ হাজার হলে বাংলা ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে যোগ দিতেই পারে। গরিব রোজগার প্রকল্পে চার মাসে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। ফলে এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য রাজ্যের হাতে সময় কম।