E-Paper

‘বালুহীন’ জেলায় জয়ী তৃণমূলের ‘ত্রয়ী’

এ বারে বাগদা উপনির্বাচনের পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি বালু মুছে গেলেন তাঁর খাসতালুক থেকে? অন্য দিকে, তাঁর সেই ‘শূন্যস্থান’ কি দখল করে নিলেন পার্থ-সুজিত-নারায়ণ ত্রয়ী?

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ ০৫:২২
Jyotipriya mallick

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোটের আগে বীরভূম আর উত্তর ২৪ পরগনা, দুই জেলাতেই একাধিক সভা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জায়গাতেই তৃণমূলের মূল কাণ্ডারি এখন জেলে। কিন্তু কোথাও যেন একটা তফাত তখন থেকেই ছিল। বীরভূমে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের (কেষ্ট) কথা বললেও উত্তর ২৪ পরগনায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (বালু) নাম বিশেষ শোনা যায়নি তাঁর মুখে। গুঞ্জনটা ছিল তখন থেকেই। এ বারে বাগদা উপনির্বাচনের পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি বালু মুছে গেলেন তাঁর খাসতালুক থেকে? অন্য দিকে, তাঁর সেই ‘শূন্যস্থান’ কি দখল করে নিলেন পার্থ-সুজিত-নারায়ণ ত্রয়ী?

তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা, বস্তুত, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে বালুর জেলযাত্রা, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি অভিযানে স্থানীয়দের ‘হামলা’, তার পরেই সন্দেশখালির আন্দোলন— এমন জটিল পরিস্থিতি সামলাতে দলীয় নেতৃত্ব পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু এবং জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীকে। দিনের পর দিন সেখানে গিয়ে, লোকজনকে বুঝিয়ে, প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে, প্রয়োজনে মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে পেরেছিলেন তাঁরা, বলছে দলের একাংশই। শাহজাহান-বাহিনীর ‘দখল করা’ জমিও কিছুটা ফেরানো হয়। ফলে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে সন্দেশখালি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি ‘লিড’ পেলেও তা হাজার আষ্টেকের বেশি এগোয়নি।

এ বারে বালুর গড় বাগদাতেও ত্রয়ীর কৌশল খেটে গেল বলে দাবি তৃণমূলের। এবং বালুকে বাদ রেখেই।

অথচ, ২০০৬ সাল থেকে বালুই ছিলেন জেলায় দলনেত্রীর আশা-ভরসা। শেষ কথাও। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরে মাঠে নামেন পার্থেরা। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ৫টি আসনের মধ্যে বনগাঁ (জয়ী বিজেপি) বাদে বাকি চারটিতেই (বারাসত, বসিরহাট, ব্যারাকপুর, দমদম) জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ব্যারাকপুর কেন্দ্রে পার্থ নিজে হারিয়েছেন বিজেপির ‘ওজনদার’ প্রার্থী অর্জুন সিংহকে। ২০১৬ সাল থেকে যে বাগদায় পিছিয়েই থেকেছে তৃণমূল, এ বারে উপনির্বাচনে সেখানেও জয় এল ত্রয়ীর হাত ধরে। স্থানীয়েরা বলছেন, প্রচারে বালুর নাম কোথাও ওঠেনি। এই পরিস্থিতিতে দলের অন্দরে অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে কি উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতিতে একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়লেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক? এমনিতে তিনি যে জামিন পেয়ে যাবেন, এমন আশু সম্ভাবনাও কেউ দেখছেন না। ফলে এই জেলায় দলের রাশ তা হলে কি এই তিন নেতার হাতেই ছেড়ে রাখবেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব— সেই জল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। ঘটনাচক্রে পার্থ, নারায়ণ, সুজিত— সকলেই দলের অন্দরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পরে জ্যোতিপ্রিয়কে খাদ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দলের অন্দরে গুঞ্জন ছিল, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতেই বালুকে ওই পদ থেকে সরিয়ে তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ বন দফতরের মন্ত্রী করা হয়। সংগঠনেও তাঁর প্রভাব কমার ইঙ্গিত সে সময় থেকে স্পষ্ট হচ্ছিল।

বাগদার ভোটে জয়ের পরে পার্থের মন্তব্য, ‘‘আমি একটাই কাজ করি, মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা সঠিক ভাবে নিচুতলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিই।’’ বালু কি তবে শেষমেশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়লেন রাজনীতিতে? মন্তব্য করতে চাননি পার্থ। নারায়ণ, এ নিয়ে মন্তব্য করেননি। সকলেরই বক্তব্য, তাঁরা ‘দলের সৈনিক।’ শীর্ষ নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই মতোই কাজ করবেন তাঁরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jyotipriya Mallick TMC Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy