বকুল দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র
তিনি বাংলা নিয়ে এমএ পাশ করেছেন, বিএড-ও করেছেন তার পর। কিন্তু বছরের পর বছর যায়, স্কুলে নিয়োগের এসএসসি পরীক্ষা আর হয় না। বকুল দেবনাথ এখন হরিণঘাটার রাস্তায় টোটো চালান।
২০১৫ সালে এমএ পাশ করেই আপার প্রাইমারি স্কুলে (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) শিক্ষকতার যোগ্যতা নির্ণায়ক টেট পরীক্ষা দিয়েছিলেন বকুল। কিন্তু বিএড না হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষায় ডাক পাননি। পরের বছর যখন নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের জন্য এসএসসি পরীক্ষা হয়, বকুল তখন বিএড করছেন। এর পর আর না হয়েছে টেট, না হয়েছে এসএসসি। ভূরি-ভূরি দুর্নীতি আর গুচ্ছ মামলার ফাঁসে এ রাজ্যে সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলে নিয়োগের গোটা পর্বই লাটে উঠে গিয়েছে।
বকুলের বাড়ি নদিয়ার হরিণঘাটায় নগরউখরা পঞ্চায়েতের মহাদেবপুর গ্রামে। বাবা-মা তাঁত চালিয়ে তাঁদের তিন ভাইকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাকি দুই ভাই গ্র্যাজুয়েট। দাদা কল্যাণী মহকুমাশাসকের দফতরে করণিকের চাকরি পেয়েছেন, ছোট ভাই কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি পেয়ে এখন দিল্লিতে। শুধু বকুলেরই ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। শিক্ষক হতে চাওয়ায় অন্য কোনও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেননি।
এ দিকে সময় যত গড়াচ্ছে, বয়স বেড়ে যাচ্ছে, ফিকে হয়ে আসছে স্কুলে চাকরির স্বপ্ন। এর মধ্যে লকড়াউন খেয়ে নিয়েছে আস্ত একটা বছর। করোনার প্রথম ঢেউ স্তিমিত হতেই সাইকেলে বড় ব্যাগ ঝুলিয়ে দোকানে-দোকানে মশলা সরবরাহের ব্যবসায় নেমেছিলেন বকুল। কিন্তু সাইকেলে আর কত মাল টানা যায়? মাস কয়েক পরে বাড়ি থেকে কিছু টাকা নিয়ে আর বাকি ধার-দেনা করে একটা টোটো কেনেন। কিন্তু সেই ব্যবসাও তাঁকে ছাড়তে হয়েছে। অনেক দেনা বাজারে। এখন সেই টোটো নিয়েই তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন যাত্রীর অপেক্ষায়।
বকুল বলেন, “এসএসসি পরীক্ষায় বসলেই যে চাকরি পাব, তার নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই তো পেলাম না! আর এখন এই কোটি-কোটি টাকার দুর্নীতি সামনে আসার পর সন্দেহ হচ্ছে, এ রাজ্যে মেধার ভিত্তিতে স্কুলে চাকরির কোনও সম্ভাবনা আদৌ আছে কি না।”
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পিএইচ ডি করছেন বকুলের বন্ধু মামুন খান। তাঁর আক্ষেপ, “২০১৭ সালে বিএড করে একটা টেট বা এসএসসি-তে বসার সুযোগ পাইনি। কোনও দিন পাব কি না, তা-ও জানি না। এ রাজ্যে আমরা তো হাজার হাজার বকুল!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy