Advertisement
E-Paper

ধর্ষণ হয়নি, দাবি উড়িয়ে দিলেন অফিসার

পাক্কা পাঁচ ঘণ্টা। আড়াইশো প্রশ্ন। অভিযুক্তের আইনজীবী প্রমাণ করার চেষ্টা করে গেলেন যে কাটোয়া ধর্ষণ মামলার অভিযোগকারিণী ওই দিন আদৌ ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৫
তদন্তকারী অফিসার জয়জিৎ লোধ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

তদন্তকারী অফিসার জয়জিৎ লোধ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাক্কা পাঁচ ঘণ্টা।

আড়াইশো প্রশ্ন।

অভিযুক্তের আইনজীবী প্রমাণ করার চেষ্টা করে গেলেন যে কাটোয়া ধর্ষণ মামলার অভিযোগকারিণী ওই দিন আদৌ ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।

আর সেই প্রশ্নবাণের মুখে কার্যত অবিচলিতই রইলেন তদন্তকারী অফিসার জয়জিৎ লোধ। প্রশ্নের ধরন শুনে বারবার বিরক্তি প্রকাশ করলেন খোদ বিচারক।

বুধবার তদন্তকারী অফিসারের এই সাক্ষ্য দিয়েই রাজ্যের অন্যতম স্পর্শকাতর ধর্ষণ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হল। এ বার হবে সওয়াল-জবাব। তার পরে রায় ঘোষণা।

২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বীরভূমের কীর্ণাহার থেকে ন্যারোগেজ রেলে বর্ধমানের কেতুগ্রামে ফেরার সময়ে পাঁচুন্দি স্টেশনের আগে ট্রেন থামিয়ে ডাকাতি করা হচ্ছিল। সেই সময়েই ১১ বছরের মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তার বিধবা মাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে পাশের ঝোপে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। আট অভিযুক্তের মধ্যে সাত জন ধরা পড়েছে। প্রধান অভিযুক্ত রেজাউল করিমকে শনাক্তও করেছেন মহিলা ও তাঁর মেয়ে।

এ দিন কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে সকাল ১১টা থেকে সাক্ষ্য শুরু হয়। জয়জিৎ বর্তমানে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দফতরে কর্মরত। সকালেই সাদা জামা, কালো ট্রাউজার্সে বিচারক কাজী আবুল হাসেমের এজলাসে হাজির হন তিনি। টানা শুনানি শুর হয়। মাঝে মিনিট চল্লিশেকের বিরতি, শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ।

অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিকে জানতে চাইছিলেন, জয়জিৎ কী ভাবে তদন্ত করেছেন, অভিযোগকারিণী কী ভাবে অভিযুক্তদের শনাক্ত করলেন ইত্যাদি। পরে তিনি গোটা ঘটনাটিকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। তাঁর দাবি, অভিযোগকারিণী ও তাঁর মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করানো হয়েছে। জবানবন্দি শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। জয়জিৎ শুধু বলেন, ‘‘এটা সত্যি নয়।’’

শুনানি শুরুর খানিক পর থেকেই অভিযুক্তদের আইনজীবীর চেষ্টা ছিল, ধর্ষণের মামলার ভেতরে না ঢুকে ডাকাতির ঘটনা নিয়ে টানা প্রশ্ন করে যাওয়ার। যা দেখে বারবার বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারকও। সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনার পৃথক তদন্ত করেছে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ ও কাটোয়া জিআরপি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা দু’টি ‘একত্র’ করেও তদন্ত করা হয়েছে।

অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন: ঘটনার দিন মোবাইল-সহ যা কিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়, সেগুলিতে কোনও ‘বিশেষ’ চিহ্ন ছিল কি না। জয়জিৎ বলেন, ‘‘বিশেষ কিছু নয়। সববটাই কেস ডায়েরিতে লেখা হয়েছিল।’’ বিচারক মন্তব্য করেন, ‘বিশেষ’ ব্যাপারটা এক-এক জনের কাছে এক-এক রকম।

অভিযুক্ত পক্ষের প্রশ্ন: ট্রেন চালক ও গার্ডের মধ্যে ওয়াকিটকিতে যে কথা হয়েছিল, তার কোনও রেকর্ড রয়েছে কি না। জয়জিৎ জানান— নেই। বিচারক বলেন, ‘‘ওয়াকিটকিতে রেকর্ড করা যায় না।’’ ভর্ৎসনার সুরে বিচারক বলেন, ‘‘এ সবের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এ সব প্রশ্ন করবেন না।’’ একটি স্কেচ ম্যাপ দেখিয়ে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী জানতে চান, ঘটনাস্থলে যে ঝোপঝাড় ছিল, তার কথা স্কেচ ম্যাপে লেখা ছিল কি না। বিচারক উল্টে তাঁকে বলেন, ‘‘এত ছোট জিনিস লেখা সম্ভব
না কি!’’

এই মামলাটির ফরেন্সিক রিপোর্ট প্রথমে এসিজেএম গ্রহণ করেছিলেন। পরে আদালত থেকে তা উধাও হয়ে যায় বলে সরকারি আইনজীবীর অভিযোগ। তিনি ফের নতুন করে ওই রিপোর্ট আনান। তাতে বলা হয়েছে, অভিযোগকারিণীর পেটিকোটে বীর্যের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু পরিমাণ এতটাই কম ছিল যে সেই নমুনা কার তা জানাতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। বেলগাছিয়ার রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যবরেটরির সহ-অধিকর্তা (বায়োলজি বিভাগ) শিপ্রা রায় আদালতেও সে কথা জানিয়েছিলেন। আরও জানানো হয়, অভিযোগকারিণীর পোশাক ও দেহরসে মেলা বীর্যের নমুনা পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ফেরোলজি-তে পাঠানো হয়েছিল। তাদের বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, পরিমাণ কম হওয়ায় অভিযুক্তদের বীর্যের নমুনার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি।

ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যবরেটরির দেওয়া রিপোর্ট কোথায়, প্রশ্ন তুলে এ দিন এজলাসে চেঁচামেচি জুড়ে দেন অভিযুক্তের আইনজীবী। জয়জিৎ বলেন, ‘‘যত দিন আমি কেতুগ্রাম থানায় ছিলাম, রিপোর্ট আসেনি।’’ অভিযুক্ত পক্ষ দাবি করে, মামলার স্বার্থে সরকার পক্ষ রিপোর্টটি সরিয়ে ফেলেছে। দু’পক্ষের আইনজীবীর কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়।

বিচারক তাঁদের থামিয়ে বলেন, ‘‘শুনানি সবাই দেখছে। আপনাদের চেঁচামেচিতে অভিযুক্তেরাও এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পড়েছে। এখানে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখুন।’’ সাধারণ ডায়েরি ও কেস ডায়েরিতে যা রয়েছে তা নিয়েই প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন তিনি। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী এক সময়ে দুঃখপ্রকাশও করেন।

অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, ওই দিন ট্রেনে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা আদৌ ঘটেনি। জয়জিৎ জোর দিয়ে বলেন, ‘‘ঘটনাটি সাজানো নয়। ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ট্রেনে ঘটেছিল। অভিযোগকারিণী ও তাঁর মেয়ে নিজে থেকেই অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছিলেন।’’ আগামী ১৪ অগস্ট থেকে সওয়াল-জবাব শুরু হওয়ার কথা।

Katwa rape bardhaman soumen dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy