পাহাড় ও সমতলে বৃষ্টি চলছেই। টানা বর্ষণে শনিবারও শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার সদর এলাকার অনেক জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এর জেরে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। দার্জিলিং, সিকিমের রাস্তায় এ দিন নতুন করে ধস নামেনি। কিন্তু, কালিম্পঙের লিকুভিরের কাছে রাস্তার হাল অতি মাত্রায় বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাই কালিম্পং, সিকিমগামী জাতীয় সড়কের ধসপ্রবণ এলাকার কাছাকাছি পূর্ত দফতরের বিশেষ টিম মোতায়েন রাখা হয় ।
পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির জন্য তিস্তা, তোর্সা সহ উত্তরবঙ্গের সব নদীই ফুঁসছে। সে জন্য বাড়তি নজরদারি শুরু করেছে সেচ দফতর। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিয়মিত উত্তরবঙ্গের নদী-ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর করছেন বলে জানা গিয়েছে।
এ দিন সকাল থেকে লাগাতার বর্ষণে কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রাজার শহরের বিভিন্ন রাজপথ ও গলিপথ ছিল জলের তলায়। শহরের লাইফ লাইন সুনীতি রোড, ব্যাঙচাতড়া রোড, কালিকা দাস রোড, আরএন রোড, বিশ্বসিংহ রোড থেকে শুরু করে দিনহাটা-কোচবিহার প্রধান সড়কে জল জমে যায়। তোর্সা, মানসাই ও রায়ডাক নদীর জল বাড়ার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে প্রশাসন।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে কোচবিহারে ভেসে গিয়েছে ১৫৫০ হেক্টর মাছ চাষের এলাকা। যার জেরে প্রাথমিকভাবে অন্তত ২৮ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে মৎস্য দফতর। বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয় ভেসে যাওয়ায় নিউকদমতলা, গাঁধীনগর, রাসমেলা ময়দান, পুলিশ লাইন সংলগ্ন এলাকা, বাদুর বাগান, ও গুড়িয়াহাটির বিভিন্ন এলাকায় এ দিন সকাল থেকে নজর কেড়েছে মাছ ধরার হিড়িক।
টানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়ে জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়া, মহামায়া পাড়া, কংগ্রেসপাড়া। এ ছাড়াও শহরের ২, ৩, ১৫, ১৬, ২২, ২৩ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বহু রাস্তাও ছিল জলের নিচে। জল জমে শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া অনেক এলাকাতেও। ফলে সকাল থেকেই স্তব্ধ হয়ে যায় জনজীবন। নিকাশি নিয়ে বাসিন্দারার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য এ দিন শহরের জল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন। অশোকবাবু জানান, পুরসভার টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা ভাল কাজ করছেন।
শিলিগুড়ির চম্পাসারির ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের সমরনগর, গণেশ ঘোষ কলোনি, ৪৫ নম্বরে ওয়ার্ডের বাঘাযতীন কলোনি এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে ছিল বিকেলের পরেও। জল ছিল দার্জিলিং মোড় লাগোয়া ৪৬ নম্বর শিবনগর, রাজীবনগর এলাকাতেও। ভক্তিনগর থানা লাগোয়া মোড়ে প্রধান সড়কে রাত পর্যন্ত জল ছিল। শাস্ত্রীনগর এলাকার অনেক জায়গাতেও জল নামেনি। জল জমে থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ৩১, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লি, অশোকনগর, নিউ মিলনপল্লি, শীতলাপাড়ার বাসিন্দাদের। বর্ধমান রোড লাগোয়া কয়েকটি এলাকাতেও এ দিন জল জমে ছিল। তিন দিন আগে শিলিগুড়ির পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কালভার্ট জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এদিনও সেটি মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা।