ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রক্তিখোলা সেতু। চলছে মেরামতি। দার্জিলিঙের গাড়িধুরার কাছে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
ঝকঝকে আশ্বিন নাকি বৃষ্টিমুখর শ্রাবণ! এখন কি শরৎ কাল, না ভরা বর্ষা! শিলিগুড়ির মানুষ তো বটেই, উত্তরবঙ্গে এই মুহূর্তে থাকা পর্যটকদের কাছেও এটাই এখন বড় ধন্ধ।
এ বার পুজোয় এক অষ্টমী ছাড়া বাকি তিন দিনই বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে। প্রবল বর্ষণে শিলিগুড়ির হালও খারাপ। আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট বলছে, গত এক দিনে শুধু শিলিগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে ১২৫ মিলিমিটার। দার্জিলিং পাহাড়ে বৃষ্টি হয়েছে ১২০ মিলিমিটার। বৃষ্টির সঙ্গে হড়পা বানে ভেসেছে ডুয়ার্সের বিন্দুর মতো জায়গা। ভেসে গিয়েছে এক কিশোর। অভিজ্ঞ মানুষেরা বলছেন, ষাটের দশকে এক বার পুজোর সময়ে এমন বৃষ্টি হয়েছিল। তাতে ডুবে গিয়েছিল জলপাইগুড়ি শহর। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে এই ঘটনা বিরল।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস কিংবা পঞ্জিকা, দু’জায়গাতেই পুজোয় বিরূপ আবহাওয়ার আশঙ্কা ছিল। ঘটনা হল, শিলিগুড়িতে মহাষষ্ঠী ও সপ্তমীর রাতে প্রবল বৃষ্টি হয়। অষ্টমীতে রাতে তেমন বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু, নবমীতে বৃষ্টির দাপট বেড়ে যায়। দশমীতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রবল বৃষ্টি নামে। বুধবার রাত পর্যন্ত বৃষ্টি কমেনি।
ফলে এক দিকে যেমন পুজোর আয়োজন পণ্ড হয়েছে, ভেসে গিয়েছে পুজোয় দোকান দেওয়া ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা, তেমনই ধস নামতে শুরু করেছে বিভিন্ন জায়গায়। মিরিকে সেতু ভেঙেছে। ছোটখাটো ধস নেমেছে কার্শিয়াং, কালিম্পঙে। সিকিমের পেলিংয়ের রাস্তাও ধসে অনেক ক্ষণ বন্ধ থেকেছে। থমথমে মুখ দেশ-বিদেশের পযটকদের। মাথায় হাত স্থানীয় মানুষেরও, যাঁরা এই পর্যটন মরসুমে ব্যবসা করে পেট চালান।
নবমীর বিকেলেই শিলিগুড়ি-মিরিক যাওয়ার রাস্তায় রক্তিখোলা সেতুতে ওঠার পথ পাথর, মাটি ধসে বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর জুলাইয়ে এই অস্থায়ী সেতুটি রাতারাতি তৈরি হয়েছিল। এ বারে নবমী তো বটেই, দশমীতেও সারা দিন প্রবল বৃষ্টিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। বুধবার সকালে রক্তির জলের তোড়ে উড়ে যায় সেতুর মুখে প্রায় ৩০ মিটার রাস্তা। সকাল থেকে সরাসরি মিরিক যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। বালির বস্তা, পাথর, বালি ফেলে রাস্তার ধসে যাওয়া অংশ মেরামত করা হয়েছে। ছোট গাড়ির পথও খুলে দেওয়া হয়।
এ দিন সন্ধ্যায় কালিঝোরার পূর্ত দফতরের বাংলো থেকে ৫০০ মিটার আগে সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে অর্ধেকের বেশি রাস্তা ধসে বসে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাতে পুলিশ ওই পথে একটা-দুটো করে ছোট গাড়ি পার করিয়েছে। এর মধ্যে পেলিঙের পথে তিন জায়গায় ধস নেমেছে। রাতে জানা গিয়েছে, কালিম্পঙের রাস্তায় লিকুভিরেও ধস নেমেছে।
টানা বৃষ্টি চললে কালিঝোরা তো বটেই, বাদবাকি রাস্তাগুলিই বা কতক্ষণ ঠিক থাকবে, তা নিয়ে চিন্তায় জেলা প্রশাসন এবং পূর্ত দফতরের অফিসারেরা। দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘‘রক্তিখোলার সেতু সারা দিনের চেষ্টায় খোলা গিয়েছে। কিন্তু ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা ভাল না। রাস্তা সেখানে বসে যাচ্ছে।’’ সিকিমগামী রাস্তাটিকে রাতের মধ্যে ঠিক করা যায়নি। সেবক ফাঁড়ির ওসি দীপঙ্কর বিশ্বাস পুলিশ কর্মীদের নিয়ে বেশি রাত অবধি গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন।
পাহাড়ের সঙ্গেই সমতলের বিধাননগর, বাগডোগরা, ফাঁসিদেওয়া এলাকায় টানা বৃষ্টিতে জল জমে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিধাননগরে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। স্পিডবোটে করে বাসিন্দাদের উদ্ধার করে শিবির অবধি পৌঁছানো হয়েছে।
এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে কোটি টাকার প্রশ্ন, এই আবহাওয়া আর কত দিন? সিকিমের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ওড়িশা থেকে একটি ঘূর্ণাবর্ত সিকিম পর্যন্ত বিস্তৃত। তার জেরেই টানা বৃষ্টি। তবে ঘূর্ণাবর্তটি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি বিশেষ বদলাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy