২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। তার পর দরপত্র ডেকে ‘দুর্গা অঙ্গন’ নির্মাণের জন্য প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিল আবাসন পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্ষদ (হিডকো)।
নিউ টাউনে ইকো পার্কের অদূরে তৈরি হবে ‘দুর্গা অঙ্গন’। রামকৃষ্ণ মিশনের জমির ঠিক পাশেই মাথা তুলবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মস্তিষ্কপ্রসূত এই মন্দির। ঘটনাচক্রে, যে ১২.৬ একর জমিতে এই ‘দুর্গা অঙ্গন’ গড়ে উঠছে, তার অদূরেই রয়েছে একটি হোটেল। পশ্চিমবঙ্গে কোনও কর্মসূচিতে এলে যে হোটেলে এসে ওঠেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা।
মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে গত ২২ অগস্ট দরপত্র আহ্বান করে হিডকো। তাতে আনুমানিক খরচ (এস্টিমেটেড অ্যামাউন্ট) ধার্য করা হয়েছে ২৬১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৩০৪ টাকা। ১১ সেপ্টেম্বর ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। তার পর কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মাটি ফেলে ১২.৬ একর জমিকে উঁচু করার কাজ শুরু হয়েছে। দরপত্রে নির্মাণের সময়সীমাও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অঙ্গীকারের দিন থেকে ২৪ মাস অর্থাৎ দু’বছরের মধ্যে ‘দুর্গা অঙ্গন’ নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোট। মমতা ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, গত বারের থেকে বেশি আসন নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরবে। তা বাস্তবায়িত হলে এবং বড় কোনও রাজনৈতিক ওলটপালট না-হলে ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ‘দুর্গা অঙ্গন’-এর কাজ শেষ হওয়ার কথা।
আরও পড়ুন:
ইতিমধ্যেই দিঘায় জগন্নাথধামের উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। গত অক্ষয়তৃতীয়ায় সেই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন মমতা। ঘটনাচক্রে, দিঘার জগন্নাথধাম নির্মাণের ক্ষেত্রেও মূল দায়িত্বে ছিল হিডকো। ‘দুর্গা অঙ্গন’-এর ক্ষেত্রেও তারাই মূল দায়িত্বে। ইতিমধ্যে হিডকোর চেয়ারম্যানও বদল করেছেন মমতা। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ২০২১ সাল থেকে হিডকোর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। কিন্তু গত ডিসেম্বরে রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরহাদকে সরানো হয়েছিল। তার পর থেকে হিডকোর কাজ সামলাচ্ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। গত সপ্তাহে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে হিডকোর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, হিডকোকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে আর রাখা হবে না। আনা হবে প্রশাসনিক সংস্কার এবং কর্মিবর্গ দফতরের (পার) অধীনে। যে দফতর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতে। বাম আমলে হিডকো ছিল আবাসন দফতরের অধীনে। আবাসনমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে সিপিএমের গৌতম দেব দীর্ঘদিন ছিলেন হিডকোর চেয়ারম্যান। মমতার শাসনের গোড়া থেকেই অবশ্য হিডকোকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে আনা হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে হিডকোর ‘অভিভাবক’ বদল হয়।
গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোটে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছে তৃণমূল। ক্রমে যা শাসকদলের পুঁজিতে পরিণত হয়েছে। সেই সূত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতির অভিযোগ করে বিজেপি। গত কয়েক বছরে বিজেপির রাজনীতির মূল কৌশলই হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ করে হিন্দুভোটকে একত্রিত করা। কয়েক বছর আগে সে প্রসঙ্গে পদ্মশিবির কিছুটা আবডাল রাখলেও ইদানীং তা-ও রাখে না। সেই প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, বিজেপির হিন্দুত্বের অস্ত্রকে ভোঁতা করার কৌশল হিসাবেই মমতা দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতাতেই তৈরি হচ্ছে ‘দুর্গা অঙ্গন’। যদিও মমতার বক্তব্য, তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাস করেন। সেই দর্শন থেকেই এই কাজ করছেন তিনি।