শীর্ষ আদালত একাধিক বার তোপ দেগেছে। তাতে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টগুলিতে বিচারপতির শূন্য পদ নিয়ে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এ বার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা যে ভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন, তা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক।
গত কাল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে আইন মন্ত্রকের ‘নীরবতা’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। বিচারপতিরা আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে হুঁশিয়ারি দেন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শূন্য পদ পূরণ করা না হলে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে।
অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের আগাম জামিনের মামলার শুনানি সময়ের মধ্যে না হওয়ায় হাইকোর্টে কাজের সমস্যা নতুন করে স্পষ্ট হয়ে যায়। তার পরেই এই তোপ দাগেন বিচারপতিরা। ডিভিশন বেঞ্চের যুক্তি, বিচারপতি নিয়োগ না করার অর্থ বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করা। তাঁদের এই উদ্বেগ যাতে দ্রুত আইনমন্ত্রীকে জানানো হয়, সে বিষয়েও রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।
কলকাতা হাইকোর্টের এই নজিরবিহীন সমালোচনা ও আক্রমণে স্বাভাবিক ভাবেই চূড়ান্ত অস্বস্তিতে আইন মন্ত্রক। আদালতগুলিতে শূন্য পদ নিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনেই চোখের জল ফেলেছিলেন। তিনি ও অন্য বিচারপতিরা একাধিক বার কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কোনও হাইকোর্ট থেকে এ হেন আক্রমণের নজির বিশেষ নেই। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কেউই এ বিষয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের এখনও আলাপ-আলোচনা চলছে। বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও পাশাপাশি বিচারপতি নিয়োগের কাজও চলছে। ২০১৬ সালেই ১২৬ জন বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। ১৯৮৯ সালের পরে এক বছরে এত জন বিচারপতি আগে কখনও নিয়োগ করা হয়নি।
কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতির অনুমোদিত পদ ৭২টি। ৩৮টি শূন্য পদ পড়ে রয়েছে। মাত্র ৩৪ জন বিচারপতিকে দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। নভেম্বরের গোড়ায় এর মধ্যে ৭ জন অবসর নেবেন। ফেব্রুয়ারিতে আরও ৩ জন অবসর নেবেন। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে বেঞ্চের আশা কর্তৃপক্ষ এই আদালতের কথা একটু ভেবে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন যাতে ব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে।’’
আইন মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, শুধু কলকাতা হাইকোর্ট বলে নয়। দেশের সব হাইকোর্টেই প্রচুর খালি পদ পড়ে রয়েছে। ২৪টি হাইকোর্টে খালি পদের ৬৬৫টি। কিন্তু তার জন্য এই সরকার দায়ী নয়। বরং মোদী সরকারের আমলে তিন বছরে ২৪৯ জন বিচারপতিকে নিয়োগ করা হয়েছে। ২২৪ জন অতিরিক্ত বিচারপতিকে স্থায়ী করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টেও ১৭ জন বিচারপতির নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যান্য শূন্য পদ পূরণের প্রক্রিয়া চলছে।
এই যুক্তিতে যে তাঁরা কান দিতে রাজি নন, তা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়েই স্পষ্ট। কড়া ভাষায় দুই বিচারপতি বলেছেন, ‘‘এই বেঞ্চের ভদ্রতাকে যেন দুর্বলতা হিসেবে না দেখা হয়।’’ স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, এই রায়ে উদ্বেগ প্রকাশের পরেও বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে কেন্দ্রের নীরবতা বজায় থাকলে তা বিচারবিভাগের কাজে গুরুতর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হবে। সেক্ষেত্রে আইনানুগ যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy