সম্প্রতি নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)-র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তার পরেই কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের তৃণমূলে ফেরার সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে। সেই আবহেই বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে শোভনের সমর্থনে হোর্ডিং পড়েছে। যা ওই কেন্দ্রে তাঁর প্রার্থী হওয়ার জল্পনা উস্কে দিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
সোমবার কালীপুজোর দিন ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাগানের সামনের ডায়মন্ড হারবার রোডের ওপরে ওই হোর্ডিং লাগানো হয়েছে। তার পরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। বেহালা পশ্চিমের ২৫ বছরের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন জেলে। শিক্ষাদুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই থেকে তিনি কারাবন্দি। যদিও আগামী নভেম্বর মাসেই পার্থের জামিনে মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আর বেহালা পশ্চিমে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন না, তা নিশ্চিত বলেই ধরছেন বেহালা পশ্চিমের অধীন তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। কারণ, গ্রেফতারির পরেই পার্থকে দল থেকে ছ’বছরের জন্য নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই কারাবাস থেকে মুক্তি পেলেও তৃণমূলে ফিরে পার্থের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেই সূত্রেই পার্থের ‘বিকল্প’ শোভনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, শোভনকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়ার পরে এমন হোর্ডিং নিউটাউন বা কলকাতার অন্য কোথাও লক্ষ করা যায়নি। তাতে জল্পনা আরও জোর পেয়েছে। তবে বেহালায় যে হোর্ডিং পড়েছে, তাতে কোনও তৃণমূল নেতা বা নেতৃত্বের নামোল্লেখ করা হয়নি। ‘বেহালা ফোরাম’, ‘বেহালা নাগরিক মঞ্চ’ ও ‘জয়তু বেহালা’ নামে হোর্ডিংটি লাগানো হয়েছে। লেখা হয়েছে ‘ধন্যবাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান হলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।’ বেহালা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘যে বা যারা এই হোর্ডিং লাগিয়েছে, তারা কোনওদিন তৃণমূল করেনি। একসময়ে ছিল সিপিএমের হার্মাদ। পরে জমানা বদলের সঙ্গে আরএসপি, কংগ্রেস এবং বিজেপি ঘুরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ঢুকেছে।’’ ওই নেতার আরও দাবি, ‘‘যারা ওই হোর্ডিং লাগিয়েছে, তারা পার্থ জেলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নেতা খুঁজতে বেরিয়ে এখন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মারফত শোভনের ঘনিষ্ঠ হয়েছে। নিয়মিত গোল পার্কে যাতায়াত করছে। আর শোভনের তৃণমূলে যোগদানের খবর নিয়ে বেহালার বাজারে নিজেদের প্রভাব জানান দিতে এসব হোর্ডিং দিয়ে বেড়াচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, শোভন তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন বেহালা পশ্চিম থেকেই। ওই কেন্দ্রের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বেহালা কলেজে ছাত্র পরিষদ থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি শোভনের। মাত্র ২১ বছর বয়সে বেহালা পশ্চিমের অধীন ১৩২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রথম বার কাউন্সিল হন তিনি। সেই আসন থেকেই টানা ২৫ বছর জিতে বরো চেয়ারম্যান এবং মেয়র পরিষদ (জল) হন।
২০১০ সালে ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় নিজের বাড়ির ওয়ার্ড ১৩১ থেকে জিতে কলকাতার মেয়র হন শোভন। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে যতবারই শোভন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, ততবারই তাঁকে প্রার্থী হতে হয়েছে বেহালা পূর্ব বিধানসভা আসনে। ২০০৬ সালে প্রথমবার সেই আসনে দাঁড়িয়ে সিপিএমের কুমকুম চক্রবর্তীর কাছে ২৬ হাজার ভোটে পরাজিত হলেও ২০১১ এবং ২০১৬ সালে বেহালা পূর্ব থেকে জিতে বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী হন শোভন। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, বেহালা পূর্ব থেকে বিধায়ক হলেও নিজের বাড়ির কেন্দ্র বেহালা পশ্চিম থেকেই বিধায়ক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন শোভন। কিন্তু তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ ওই কেন্দ্রের বিধায়ক হওয়ায় তখন তাঁর ইচ্ছাপূরণ হয়নি।
এত বছর পরে শোভনের সামনে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক হওয়ার সুযোগ এসেছে। যদিও তিনি এখন আর বেহালা পশ্চিমের বাসিন্দা নন। শোভন এখন থাকেন গোল পার্কের বহুতল আবাসনে। যা বালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্ভুক্ত। বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রটি কলকাতা পুরসভার ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি। ঘটনাচক্রে, যার মধ্যে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শোভনজায়া রত্না চট্টোপাধ্যায়।