Advertisement
E-Paper

মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ধৈঞ্চা

প্রাকৃতিক উপায়ে এক ইঞ্চি মাটির স্তর তৈরি হতে হাজার বছরের বেশি সময় লেগেছে। অথচ সেই মাটিকেই অবহেলা করছি। চটজলদি লাভের আশায় রাসায়নিক সারকে হাতিয়ার করে উচ্চফলনশীল ও সংকর জাতের ফসল চাষ করে মাটিকে অনুর্বর করে তুলছি। মজুত খাদ্য ভাণ্ডারে ঘাটতির জেরে মাটির স্বাস্থ্য ধারাবাহিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

পার্থ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০২:৪৭

প্রাকৃতিক উপায়ে এক ইঞ্চি মাটির স্তর তৈরি হতে হাজার বছরের বেশি সময় লেগেছে। অথচ সেই মাটিকেই অবহেলা করছি। চটজলদি লাভের আশায় রাসায়নিক সারকে হাতিয়ার করে উচ্চফলনশীল ও সংকর জাতের ফসল চাষ করে মাটিকে অনুর্বর করে তুলছি। মজুত খাদ্য ভাণ্ডারে ঘাটতির জেরে মাটির স্বাস্থ্য ধারাবাহিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কমছে ফসলের উৎপাদন, গুণমান। এই প্রেক্ষিতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ও চাষের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চাষিদের জৈব সারের প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সারের সহজ উৎস সবুজ সার, যা ব্যবস্থা করা যায় প্রাক-বর্ষায় আমন চাষের আগে।

সবুজ সার

ধৈঞ্চা, শন, মুগ ইত্যাদি জমিতে চাষ করে নরম অবস্থায় চষে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়াকে বলা হয় সবুজ সার। সুবাবুল জাতীয় গাছের পাতা ও নরম ডগা কেটে মাটিতে সবুজ সার হিসাবে চষে দেওয়া যায়। সবুজ সার মাটির জৈব কার্বন ভাণ্ডারকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে। সবুজ সারের সহজতম উৎস প্রাক বর্ষায় ধৈঞ্চা চাষ।

জৈব কার্বন কী

জৈব কার্বন হল মাটির প্রাণ, যা গ্রহণ করে বেঁচে থাকে মাটির অসংখ্য উপকারী জীবাণু বা অণুজীব। এই অণুজীবসমূহ সারকে ভেঙে সহজ পুষ্টিকনায় রূপান্তর ঘটিয়ে সারকে ফসলের গ্রহণযোগ্য করে তোলে। সূর্যের প্রখর উত্তাপে মাটির জৈব কার্বন পুড়ে নষ্ট হয় ও মাটিকে এক প্রকার খনিজে পরিণত করে। মাটিকে জীবন্ত রাখতে, জৈব কার্বনের মজুতকে সমৃদ্ধ করতে পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগের প্রয়োজন যা সবুজ সার ধৈঞ্চা চাষের মাধ্যমে পাওয়া যায়। দুই-তিন ফসলি জমিতে বছরে অন্তত এক বার যথেষ্ট পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

ধৈঞ্চার উপকারিতা

• মাটির জো নির্ণয় করে মাটির গঠন ও নমনীয়তাকে উন্নত করে ফলে মাটির জলধারণ ও পুষ্টিধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং বাতাস চলাচল সহজ হয়।

• মাটির উপকারী জীবাণুর সক্রিয়তা বাড়ে ফলে ব্যবহৃত সারের ঔৎকর্ষ বেড়ে যায়। পুষ্টি মৌলের চুঁইয়ে যাওয়া কমায় অপচয় কমে।

• উপকারী জীবাণু ও অণুজীবের সক্রিয়তার ফলে সবুজ সার মাটির গভীর স্তরের পুষ্টি কণাকে উপরের স্তরে এনে ফসলে জোগান বাড়ায়।

• অম্ল মাটির অম্লত্ব কমাতে ও কখনও কখনও লবণাক্ত ভাব কমাতে সবুজ সার যথেষ্ট সহায়ক।

• বিঘা প্রতি প্রায় ১০-৩০ কুইন্টাল পর্যন্ত জৈব সার মাটিতে যোগ হয়, যা মাটিকে প্রাণবন্ত রাখে।

• বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে বিঘা প্রতি প্রায় ৮-১৩ কেজি নাইট্রোজেন পুষ্টিকণার জোগান দেয় যা ১৮-২৮ কেজি ইউরিয়ার সমান ফলে পরবর্তী ফসলে ইউরিয়ার সাশ্রয় হয়।

• সবুজ সার জমি ঢেকে রাখায় ক্ষয় রোধ হয়, মাটির রস সংরক্ষিত থাকে, আগাছার উপদ্রব হয় না।

• সবুজ সার ব্যবহারে ফসলে রোগ-পোকার আক্রমণ কম হয়।

ধৈঞ্চা বোনার সময়

প্রাক-বর্ষার সুযোগ নিয়ে ধৈঞ্চা বুনতে হবে। উপযুক্ত সময় হল জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আষাঢ় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ।

ধান চাষের আগে

সবুজ সার আমন ধান চাষের আগে মাটিতে প্রয়োগ করা হয়। ধান চাষের ৭-৮ সপ্তাহ আগে জমিতে চাষ দিয়ে বিঘে প্রতি ৩ কেজি ধৈঞ্চা বীজ ছিটিয়ে বুনতে হবে। বীজ বোনার ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে ধৈঞ্চা গাছ নরম থাকতে থাকতে লাঙল দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি ভিজে থাকলে ১০-১২ দিনের মধ্যে ধৈঞ্চা গাছ পচে যায়। এরপর জমি কাদা করে মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সুষম সার প্রয়োগ করে ধান রুইতে হবে।

লেখক: মুখ্য আঞ্চলিক অধিকর্তা, ইফকো।

soil healthy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy