Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সবুজে সবুজের রোগ-পোকা দমন

ভাল-মন্দ বিবেচনা না করেই ফসলে রোগপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইচ্ছামতো রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করেন চাষিরা। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হয় তেমনই নানা মারণব্যাধি বাসা বাঁধে আমাদের দেহে। অথচ, রাসায়নিকের সাহায্য না নিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে কিছু উদ্ভিদের সাহায্য নিয়ে বহু রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

পারমিতা ভৌমিক
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৮
Share: Save:

ভাল-মন্দ বিবেচনা না করেই ফসলে রোগপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইচ্ছামতো রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করেন চাষিরা। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হয় তেমনই নানা মারণব্যাধি বাসা বাঁধে আমাদের দেহে। অথচ, রাসায়নিকের সাহায্য না নিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে কিছু উদ্ভিদের সাহায্য নিয়ে বহু রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এমনই কিছু উপকারী উদ্ভিদের হদিশ নীচে—

রসুন ও লাল পেঁয়াজ: রসুনের কোয়া বা পেঁয়াজের কন্দ ভাল ভাবে কেটে নিয়ে ২ টেবিল চামচ তেলে এক দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর আধ লিটার সাবান জল মিশিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। ওই দ্রবণ ২০ গুণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলে ধসা, পাতায় ছত্রাকজনিত দাগ, ক্ষতরোগ, অগ্র ঝলসানো রোগ, ঢলে পড়া, বাদামি দাগ, সাদা ঝলসা, ফল পচা, ফল ও কাণ্ড পচা, গোড়া পচা, কাণ্ড ও শিকড় পচা, কুটে ইত্যাদি উপশম হয়।

নটে শাক, সজনে, দোপাটি, থানকুনি পাতা: এই চারটেরই পদ্ধতিটা এক। এক কেজি পাতা থেকে নির্যাস বের করে ৩ লিটার জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। নটে শাক, সজনে, থানকুনির নির্যাস থেকে ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া, বাদামি দাগ, ফল ও কাণ্ড পচা, গোড়া পচা, কাণ্ড ও শিকড় পচা, কুটে রোগ, ধসা, ঢলে পড়া, পাতা ঝলসার মতো রোগ সারে। দোপাটি পাতার নির্যাস ক্ষত রোগ, ফল পচা, পাতায় দাগ, পাতায় চিতি দাগের মতো সমস্যা সারায়।

• পেঁপে: পাতা মাড়াই করে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে ও পুরো তরল সার করে স্প্রে করতে হবে। পাতায় ছত্রাকজনিত দাগ, পাতায় চিতি দাগ, পাতায় দাগ, ফল ও কাণ্ড পচা সারে।

লজ্জাবতী: পুরো গাছ মাড়াই করে সারা রাত ধরে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে ও তরল করে স্প্রে করতে হবে। ফল ও কাণ্ড পচা, পাতায় দাগ ইত্যাদি সারে।

• আদা: ৫০০ গ্রাম আদার কন্দ থেকে নির্যাস বের করে তার সঙ্গে এক লিটার গোমূত্র ও ১০ লিটার জল মিশিয়ে স্প্রে করলে পাতায় ছত্রাকজনিত দাগ, চিতি দাগ, পাতায় দাগ, ধসা সারে।

• গাঁদা: গাছের শিকড় থেকে নির্যাস বের করতে হবে। প্রতি লিটার জলের সঙ্গে ২-৪ টেবিল চামচ মিশিয়ে স্প্রে করলে জাব পোকা, কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন করা যায়।

• গোলমরিচ: বীজ গুঁড়ো করে জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়। আবার বীজের গুঁড়ো গুদামজাত শস্যের চারপাশে ছড়িয়ে দিলে হীরক পিঠ মথ, তুলোর দাগ সৃষ্টিকারী পোকা, কাটুই পোকা নিয়ন্ত্রণ হয়।

• ঝালমরিচ: ফল মাড়াইয়ের পর নির্যাস বের করে প্রতি লিটার জলে ২-৩ কাপ মিশিয়ে স্প্রে করলে গুদামে ধানের মথ দমন করা যায়।

• আতা: এক কেজি আতার বীজ গুঁড়ো করে তিন লিটার জলে সাত দিনের জন্য ছড়িয়ে রাখতে হবে। তারপর ছেঁকে নিয়ে ওই দ্রবণ স্প্রে করতে হবে। এতে ধানের পোকা, জাব পোকা, পিঁপড়ে ইত্যাদি দূর হয়।

• নিম: দুই থেকে তিন মুঠো পরিণত বীজ নিয়ে ঝাড়াই করে বা জলে ভিজিয়ে তার খোসা ছাড়াতে হবে। এরপর বীজগুলো ভাল ভাবে গুঁড়ো করতে হবে। বীজের গুঁড়ো ৩-৫ লিটার জলে অন্ততপক্ষে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর দ্রবণটি ছেঁকে নিয়ে স্প্রে করলে ধানের পোকা, হীরক পিঠ মথ দমন করা যায়।

• চন্দ্রমল্লিকা: প্রথমে ফুল শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এবার এক গ্যালন জলের সঙ্গে ৬-৭ টেবিল চামচ শুকনো ও গুঁড়ো করা ফুল মিশিয়ে স্প্রে করলে বেশ কিছু রোগপোকা নিয়ন্ত্রিত হয়।

• তামাক: মধ্যশিরা ও কাণ্ড কয়েক মিনিট জলে ফুটিয়ে বা ৩-৪ দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। এই দ্রবণও বিভিন্ন রোগপোকা নিয়ন্ত্রণে কাজে আসে।

• বাঁশ: বাঁশের শিকড় গুঁড়ো করে তার সঙ্গে জল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। কন্দ ফুটিয়ে তার নির্যাসও স্প্রে করা যেতে পারে।

• পুদিনা, ধনে: বাগানের চারপাশে এই গাছগুলো লাগাতে হবে। এগুলোর তীব্র গন্ধ পোকামাকড় তাড়াতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ বর্গমিটার বেডে ৮-১০টি গাঁদা গাছ রক্ষী ফসল হিসাবে লাগিয়ে ২০-২৫টি রসুন বা পেঁয়াজের কন্দ মধ্যবর্তী ফসল হিসাবে লাগাতে হবে।

• টোম্যাটো: পাতা ও কাণ্ড জলে ফোটানোর পরে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। লেদা পোকা ও কালো বা সবুজ মাছির ক্ষেত্রে এটা উপকারী। ভবিষ্যতে পুনরায় পোকার আক্রমণ আটকায় এই দ্রবণ।

• অশ্বগন্ধা: এর পাতা থেকে নির্যাস বের করে প্রতি লিটার জলে ২-৫ টেবিল চামচ মিশিয়ে স্প্রে করলে ধসা, ফল পচা, পাতায় দাগ আটকায়।

• অশোক: এক কেজি পাতা থেকে নির্যাস বের করে তার সঙ্গে ৩ লিটার জল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। কচি কাণ্ড ও পাতা গাছের মাঝখানে লাগালে পোকা দূরে যায়।

• বিচুটি: এই গাছের ফুল মাড়াই করে গুদামজাত শস্যের চারপাশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আবার ডাল কেটে রোদে শুকিয়ে নিয়ে পোড়ানোর পরে সেই ছাই পাতায় ছড়িয়ে দিলে ভূট্টার মোচা ছিদ্রকারী পোকা ও পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা দূরে সরে।

লেখিকা মালদহ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vegetable pest control agriculture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE